সামিট পাওয়ারের বিরুদ্ধে ১,১১৩ কোটি টাকা কর ফাঁকির অভিযোগ, এনবিআরের তদন্ত চলছে

0

দেশের বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী কোম্পানি সামিট পাওয়ার গ্রুপের বিরুদ্ধে ১,১১৩ কোটি টাকা কর ফাঁকির অভিযোগ উঠেছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এর তদন্তে ধরা পড়া এই কেলেঙ্কারির তথ্য গতকাল ২২ ডিসেম্বর সরকারি সংবাদ সম্মেলনে প্রকাশ করা হয়। এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত আমদানি করা যন্ত্রপাতি ও জ্বালানির দাম বাড়িয়ে দেখানো এবং বৈদেশিক লেনদেনে গোপন হিসাবের মাধ্যমে এই কর ফাঁকি করা হয়েছে।

কীভাবে কর ফাঁকি দেওয়া হয়েছে?

এনবিআরের তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে:
১. জ্বালানির দাম গড়পড়তা: বিদেশ থেকে আমদানি করা তরল জ্বালানি (ফার্নেস অয়েল) এর দাম প্রকৃত মূল্যের চেয়ে ২০-২৫% বেশি দেখানো হয়েছে। এর মাধ্যমে অতিরিক্ত ভ্যাট ও ট্যাক্স ফেরত নেওয়া হয়েছে।
২. নকল চালান: বিদেশি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগসাজশ করে নকল চালান তৈরি করে টাকা পাচার করা হয়েছে।
৩. বিদেশে লাভ লুকানো: বিদেশে অবস্থিত সহযোগী কোম্পানিগুলোতে মুনাফা পাঠিয়ে দেশে করযোগ্য আয় কম দেখানো হয়েছে।

এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম বলেন,

“এই তদন্ত প্রমাণ করেছে, কিছু প্রতিষ্ঠান জটিল ফিন্যান্সিয়াল কৌশলে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে ক্ষতি করছে। দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

সামিট পাওয়ারের জবাব

সামিট পাওয়ারের পক্ষ থেকে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে অভিযোগগুলোকে “অতিরঞ্জিত ও একপেশে” বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তাদের দাবি, বৈদেশিক মুদ্রার ওঠানামা এবং জ্বালানি বাজারের অস্থিরতার কারণে হিসাবের গরমিল হতে পারে। কোম্পানির একজন মুখপাত্র বলেন,

“আমরা এনবিআরের সাথে পূর্ণ সহযোগিতা করছি। আইনি প্রক্রিয়া মেনেই বিষয়টি নিষ্পত্তি হবে।”

বিশ্লেষকদের মত

অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেনের মতে,

“বড় কোম্পানিগুলোর কর ফাঁকি জাতীয় বাজেটের জন্য বড় হুমকি। এই তদন্ত অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের জন্য একটি সতর্কবার্তা।”

জনগণের ওপর প্রভাব

এনবিআর হিসাব করে দেখিয়েছে, এই কর ফাঁকির অর্থ দিয়ে প্রায়:

  • ৫০০টি প্রাথমিক স্কুল নির্মাণ করা যেত,
  • ২ লাখ গরিব পরিবারকে ৬ মাসের খাদ্য সহায়তা দেওয়া যেত।

পরবর্তী পদক্ষেপ

১. এনবিআর সামিট পাওয়ারের অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করার নির্দেশ দিয়েছে।
২. কোম্পানির শীর্ষ কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করা হয়েছে।
৩. আদালতের মাধ্যমে ফাঁকি করা টাকা ফেরত আদায়ের প্রক্রিয়া শুরু হবে।

শেষ কথা
এই কেলেঙ্কারি প্রশ্ন তুলেছে কর্পোরেট গভর্ন্যান্স ও নীতিনির্ধারকদের তদারকি ব্যবস্থা নিয়ে। সাধারণ মানুষ চায়, যেন তাদের কষ্টের ট্যাক্স যেন কোনো অসাধু চক্রের পকেটে না যায়।

যোগাযোগ:

  • জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর): ০২-৫৫০০০০১১ | ওয়েবসাইট:nbr.gov.bd
  • সামিট পাওয়ার গ্রুপ:summitpower.com

Leave A Reply

Your email address will not be published.