মাসকাট, ওমান: “কোম্পানির ক্যাম্প থেকে হঠাৎ বের করে দেওয়া হলো। নতুন জায়গায় ভাড়া নেওয়ার টাকা নেই। এখন রাস্তায় রাত কাটাই।” ওমানের একটি নির্মাণ শ্রমিক ক্যাম্পের বাইরে বসে এভাবেই মর্মান্তিক অভিজ্ঞতার কথা জানালেন বাংলাদেশি প্রবাসী রহিম মিয়া (৩৮)। গতকাল বুধবার (৩ এপ্রিল ২০২৫) স্থানীয় মানবাধিকার সংগঠন “প্রবাসী সুরক্ষা ফোরাম”-এর সহায়তায় আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি ও তাঁর মতো আরও ১৫ জন শ্রমিকের বেদনাদায়ক কাহিনী উঠে আসে।
কী ঘটেছে?
রহিম মিয়া জানান, গত ফেব্রুয়ারিতে তাঁর কর্মসংস্থানকারী কোম্পানি অফিসিয়াল নোটিস ছাড়াই তাঁদের ক্যাম্প ছেড়ে যেতে বাধ্য করে। কারণ হিসেবে কোম্পানি “অর্থনৈতিক সংকট” এর কথা বলে। কিন্তু নতুন কাজের পারমিট বা বাড়ি ভাড়ার জন্য আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়নি। রহিমের ভাষায়, “১০ বছর ধরে এই কোম্পানিকে দিয়েছি শ্রম। আজ আমার ঠিকানাই নেই।”
কোথায় রয়েছেন তাঁরা?
রহিম ও অন্য শ্রমিকরা বর্তমানে মাসকাটের আল-সিব এলাকায় একটি পরিত্যক্ত গ্যারাজে আশ্রয় নিয়েছেন। স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবীরা প্রতিদিন খাবার দিচ্ছেন, কিন্তু শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ বা নিরাপদ পানির অভাবেই ভুগছেন সবাই।
কী বলছে নিয়োগকর্তা প্রতিষ্ঠান?
ঘটনাটি নিশ্চিত করতে গিয়ে সংশ্লিষ্ট কোম্পানির এইচআর ম্যানেজার সালেম আল-বাদরি বলেন, “আমরা আইন মেনেই সবকিছু করেছি। শ্রমিকদের ৩ মাসের বেতন আগাম দেওয়া হয়েছে।” তবে রহিম দাবি করেন, “টাকা দেওয়া হয়নি। দলিলে জাল স্বাক্ষর করিয়ে নেওয়া হয়েছে।”
প্রতিক্রিয়া: মানবাধিকার সংগঠন ও দূতাবাস
প্রবাসী সুরক্ষা ফোরামের সমন্বয়ক আয়েশা আল-মামরি বলেন, “ওমানে এমন ঘটনা নতুন নয়। অনেক সময় নিয়োগকর্তারা শ্রম আইন ভেঙে প্রবাসীদের বেকায়দায় ফেলেন। আমরা আইনি লড়াইয়ে সাহায্য করব।”
বাংলাদেশ দূতাবাসের পক্ষ থেকে জরুরি সভা ডেকে ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। রাষ্ট্রদূত ড. ফারহানা আক্তার বলেন, “ওমান সরকারের সাথে আলোচনা চলছে। শিগগিরই সমাধান মিলবে বলে আশা করি।”
স্থানীয় আইন কী বলে?
ওমানের শ্রম আইন অনুযায়ী, কোনো কর্মীকে বাসস্থান থেকে উচ্ছেদ করতে কমপক্ষে ৩০ দিনের নোটিস দিতে হয়। এ ছাড়া, কাজের চুক্তি শেষ হলে দেশে ফেরত পাঠানোর দায়িত্ব নিয়োগকর্তার। কিন্তু রহিমের দাবি, “কোনো নোটিসই দেওয়া হয়নি। পাসপোর্টও আটকে রাখা হয়েছে।”
সমাজের পক্ষ থেকে সহযোগিতা
স্থানীয় মসজিদ ও বাংলাদেশি কমিউনিটি রহিমদের জন্য চাল, ডাল ও প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছে। প্রবাসী ব্যবসায়ী জাহিদ হাসান বলেন, “আমরা ২০ জন মিলে একটি ফান্ড তৈরি করেছি। যতদিন না সমাধান মিলছে, ততদিন সাহায্য চালিয়ে যাব।”
পরিশেষে:
রহিমের মতো শতাধিক প্রবাসী আজও ওমানে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। তাদের অধিকার রক্ষায় বাংলাদেশ ও ওমান সরকারের সমন্বিত উদ্যোগই এখন সবচেয়ে জরুরি। দূতাবাস সূত্রে জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে দুই দেশের যৌথ টাস্কফোর্স বৈঠক হবে এই ইস্যুতে।