ঢাকা, বাংলাদেশ: ঘরোয়া ক্রিকেটে ঝড় তোলা মাঠের নাম সাকিব হাসান। টেস্ট, ওডিআই ও টি-টোয়েন্টি—জাতীয় দলের তিন ফরম্যাটেই জার্সি গায়ে খেলার স্বপ্ন দেখছেন এই ১৯ বছর বয়সী অলরাউন্ডার। গতকাল বুধবার (৩ এপ্রিল ২০২৫) ঢাকার মিরপুর স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত অনূর্ধ্ব-১৯ টুর্নামেন্টের ফাইনালে ম্যাচসেরা হন তিনি। মাঠের বাইরে সাকিবের মুখে একটাই জাদুমন্ত্র: “কঠোর পরিশ্রম আর ধৈর্য্য রাখলে একদিন অবশ্যই জয়ী হবো!”
গ্রামের মাঠ থেকে জাতীয় স্বপ্ন
সাকিবের বাড়ি বরিশালের বানারিপাড়া উপজেলায়। বাবার সাথে ধান কাটার ফাঁকে গ্রামের মাঠে ক্রিকেটের হাতেখড়ি। স্থানীয় কোচ রফিকুল ইসলাম বলেন, “১২ বছর বয়সে প্রথম দেখি, বলের সুইং আর ব্যাটিংয়ের টাইমিং অসাধারণ! গ্রামে ভালো ফ্যাসিলিটি না থাকায় তাকে ঢাকায় পাঠাই।”
বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) অনূর্ধ্ব-১৯ একাডেমিতে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন।
দৈনিক রুটিন: ভোর ৫টা থেকে রাত ১০টা
সাকিবের দিন শুরু হয় ভোর ৫টায়। ফিটনেস সেশনের পর সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত নেট প্র্যাকটিস। বিকেলে টার্গেট ট্রেনিং ও স্ট্র্যাটেজি ক্লাস। রাতে পড়াশোনা। “মা বলেছেন, ক্রিকেটার হতে গেলে শিক্ষাও জরুরি,” হাসতে হাসতে বলেন তিনি।
কোচ ও সাবেক খেলোয়াড়দের প্রতিক্রিয়া
জাতীয় দলের সাবেক ক্যাপ্টেন মাশরাফি বিন মর্তুজা বলেন, “সাকিবের মধ্যে অলরাউন্ডার হওয়ার সব গুণ আছে। তাকে নিয়মিত এ-দলে সুযোগ দেওয়া উচিত।”
অনূর্ধ্ব-১৯ দলের প্রধান কোচ নিয়াজ মাহমুদ যোগ করেন, “২০২৬ সালের বিশ্বকাপের জন্য তাকে প্রস্তুত করছি। স্পিন বোলিংয়ের পাশাপাশি তার ফাস্ট বোলিংও উন্নত হচ্ছে।”
পরিবারের সংগ্রাম
সাকিবের বাবা রিকশাচালক জাহিদ মিয়া। মা বাসার কাজ করেন। সাকিব বলেন, “বাবা-মা তাদের কমফোর্ট জোন ছেড়ে আমাকে ঢাকায় পাঠিয়েছেন। তাদের এই ত্যাগের ঋণ শোধ করতে হবে মাঠে রান আর উইকেট দিয়ে।”
প্রতিযোগিতা ও চ্যালেঞ্জ
জাতীয় দলে তিন ফরম্যাটে খেলতে হলে লিটন, শাকিব, মেহেদীর মতো তারকাদের সাথে পাল্লা দিতে হবে। সাকিব বলেন, “তারা আমার আইডল। তাদের কাছ থেকে শিখে নিজের জায়গা তৈরি করব।”
পরিশেষে:
সাকিবের লক্ষ্য আগামী দুই বছরের মধ্যে জাতীয় দলে ডেব্যু করা। ক্রিকেট বিশ্লেষকরা মনে করছেন, তার মতো তরুণ প্রতিভাদের সুযোগ দিলে বাংলাদেশ দল ভবিষ্যতে আরও শক্তিশালী হবে। সাকিবের কথায়, “স্বপ্ন দেখার সাহস থাকলে পাহাড়ও ঠেলে দেওয়া যায়!”