রমজান মাসে সেহরি ও ইফতারের সময়সূচি মানতে গিয়ে অনেকের মনে প্রশ্ন জাগে: ফরজ গোসল (যেমন: জানাবাতের গোসল) না করেই সেহরি খাওয়া জায়েজ কি না? ইসলামি ফিকহ্ ও হাদিসের আলোকে এই জরুরি বিষয়ে বিস্তারিত জানাচ্ছেন ধর্মীয় বিশেষজ্ঞরা।
ফরজ গোসল কী এবং কখন আবশ্যক?
ইসলামি শরিয়ত অনুযায়ী, কিছু নির্দিষ্ট অবস্থায় গোসল ফরজ হয়। যেমন:
১. স্বপ্নদোষ বা যৌন মিলনের পর (জানাবাতের অবস্থা)।
২. মহিলাদের হায়েজ (মাসিক) ও নিফাস (প্রসব-পরবর্তী রক্তপাত) শেষ হলে।
এই অবস্থায় নামাজ, রোজা বা কুরআন স্পর্শ করার আগে গোসল ফরজ।
ফরজ গোসল না করে সেহরি খাওয়া সম্পর্কে ইসলাম কী বলে?
মদিনার ইসলামিক ইউনিভার্সিটির স্কলার ড. মুহাম্মদ ইব্রাহিম আল-হুসাইনি ব্যাখ্যা করেন, “সেহরি খাওয়ার জন্য গোসল ফরজ নয়। যদি কারো ফরজ গোসল বাকি থাকে, তবুও সে সেহরি খেতে পারবে। তবে ফজরের নামাজের আগে অবশ্যই গোসল সম্পন্ন করতে হবে। রোজা তখনই শুদ্ধ হবে যখন গোসল করে নেওয়া হবে।”
উদাহরণ:
- আপনি যদি রাতের বেলা জানাবাতের গোসল ফরজ হওয়ার পরও সেহরি খান, তাহলে ফজরের আগে গোসল করলেই রোজা শুদ্ধ হবে।
- যদি গোসল না করে ফজর হয়ে যায়, তবে ওই দিনের রোজা রাখতে পারবেন না। পরে কাজা আদায় করতে হবে।
জরুরি পরিস্থিতিতে করণীয়:
- পরিস্থিতি ১:সেহরি খাওয়ার সময় হঠাৎ মনে পড়লো গোসল ফরজ আছে → সেহরি শেষ করে দ্রুত গোসল করুন।
- পরিস্থিতি ২:গোসলের সুযোগ নেই (পানি/সময় কম) → টয়লেটে ওযু করে নিয়ত করুন এবং ফজরের পর গোসল করে নিন।
সুন্নত গোসল vs ফরজ গোসল:
- ফরজ গোসল:উপরের শর্তগুলোতে আবশ্যক। না করলে রোজা বা নামাজ শুদ্ধ হবে না।
- সুন্নত গোসল:যেমন—জুমার দিন, ঈদের দিন গোসল। এটি না করলে রোজার ক্ষতি নেই।
মহিলাদের ক্ষেত্রে বিশেষ নির্দেশনা:
হায়েজ বা নিফাসের রক্ত থাকা অবস্থায় রোজা রাখা নিষিদ্ধ। রক্ত বন্ধ হওয়ার পর গোসল করেই কেবল রোজা রাখা যাবে। যদি সেহরির সময় রক্ত বন্ধ হয়ে যায় কিন্তু গোসল করার সময় না থাকে, তাহলে নিয়ত করলে রোজা শুদ্ধ হবে।
বিশেষজ্ঞদের সতর্কতা:
- গোসল ফরজ হলে তা অবহেলা করবেন না। এতে রোজা ও নামাজের সাওয়াব নষ্ট হয়।
- অজু বা গোসলের আগে সেহরি খাওয়া জায়েজ, তবে সময়মতো গোসল নিশ্চিত করুন।
সচরাচর জিজ্ঞাসা (FAQ):
প্রশ্ন: গোসল না করেই সকালে নাস্তা করলে কী হবে?
উত্তর: ফজরের আগে গোসল করলে রোজা শুদ্ধ। ফজরের পর গোসল করলে রোজা ভেঙে যাবে এবং কাজা আদায় করতে হবে।
প্রশ্ন: যদি গোসলের সময় পানির অভাব হয়?
উত্তর: টয়লেটে টয়লেটে ওযু করে তায়াম্মুম করুন। এটি গোসলের বিকল্প হিসেবে গণ্য হবে।