চুল-নখ কাটার পর সেগুলো ফেলার সঠিক পদ্ধতি নিয়ে অনেকেরই সংশয় থাকে। ধর্মীয় রীতি, সাংস্কৃতিক বিশ্বাস কিংবা পরিবেশের নিরাপত্তা—কোন দিকটি মেনে চলবেন? বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ ও সহজ সমাধান নিয়ে এই প্রতিবেদন।
ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গি:
- ইসলাম:ইসলামিক স্কলার মুফতি আবুল কাসেমের মতে, “চুল-নখ মাটিতে পুঁতে ফেলা উত্তম। হাদিসে এসেছে, মানুষের দেহের অংশ যা থেকে নতুন সৃষ্টি সম্ভব (চুল, নখ), তা যত্রতত্র ফেললে অপবিত্রতার আশঙ্কা থাকে।”
- হিন্দু ধর্ম:পুরোহিত জয়ন্ত চক্রবর্তী জানান, “হিন্দু শাস্ত্রমতে, চুল-নখ পবিত্র জলে (নদী/সমুদ্র) ভাসিয়ে দেওয়া হয়। তবে পরিবেশ রক্ষায় এখন মাটিতে পুঁতেও অনেকে সমাধান খুঁজেন।”
পরিবেশবান্ধব সমাধান:
পরিবেশবিদ ড. ফারহানা আহমেদ বলেন, “প্লাস্টিকের মতো চুল-নখ প্রকৃতিতে মিশতে শত বছর লাগে না, কিন্তু এগুলো যত্রতত্র ফেললে ড্রেনেজ ব্যাহত হয় বা পানি দূষিত হতে পারে।” তাঁর পরামর্শ:
১. বায়োডিগ্রেডেবল ব্যাগে ফেলুন: পচনশীল ব্যাগে ভরে সাধারণ ডাস্টবিনে ফেলতে পারেন।
২. কম্পোস্ট সার তৈরি: বাগানে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে জৈব সারে রূপান্তর করুন (শুধু অর্গানিক চুল-নখ, রাসায়নিকমুক্ত হলে)।
৩. রিসাইক্লিং উদ্যোগ: কিছু প্রতিষ্ঠান চুল সংগ্রহ করে উইগ, গুঁড়া সার ইত্যাদি তৈরি করে। খোঁজ নিয়ে যোগাযোগ করুন।
সাধারণ ভুল ও সচেতনতা:
- আগুনে পোড়ানো:অনেকেই চুল পোড়ান, কিন্তু এতে বায়ু দূষণ ও শ্বাসকষ্টের ঝুঁকি বাড়ে।
- নদীতে ফেলা:ধর্মীয় বিশ্বাসে নদীতে ফেললেও পরিবেশের ক্ষতি হয়। প্লাস্টিকের থলেতে ভরে না ফেলাই ভালো।
কী করবেন? সহজ ৪টি ধাপ:
১. চুল-নখ কাটার পর একত্রে সংগ্রহ করুন।
২. কাগজ বা পাতা দিয়ে মুড়ে পচনশীল ব্যাগে রাখুন।
৩. বাড়ির আঙিনায় ছোট গর্ত খুঁড়ে পুঁতে দিন অথবা ডাস্টবিনে ফেলুন।
৪. সম্ভব হলে স্থানীয় রিসাইক্লিং সেন্টারে জমা দিন।
বিশেষজ্ঞদের হুঁশিয়ারি:
- চুল-নখের মাধ্যমে রোগজীবাণু ছড়ানোর ঝুঁকি থাকে। তাই খোলা জায়গায় না ফেলে ঢাকনা দেওয়া ডাস্টবিন ব্যবহার করুন।
- পোষা প্রাণীর চুল-নখ ফেলার ক্ষেত্রেও একই নিয়ম মেনে চলুন।
সচরাচর জিজ্ঞাসা (FAQ):
প্রশ্ন: বাচ্চাদের নখ-চুল ফেলারও কি একই নিয়ম?
উত্তর: হ্যাঁ, শিশু-বড় সবাইকের ক্ষেত্রে একই পদ্ধতি প্রযোজ্য।
প্রশ্ন: ধর্ম মেনে চুল পুঁতে ফেলতে না পারলে কী করব?
উত্তর: ডাস্টবিনে ফেলার আগে কাগজে মুড়ে লেবেল লিখে রাখুন: “জৈব বর্জ্য”। এতে পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা সতর্ক থাকবেন।