মরুভূমির খরতাপে যখন জনজীবন বিপর্যস্ত, তখন রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর একটি দোয়ায় আকাশ ফেটে নামে মুষলধারে বৃষ্টি। এই ঘটনা ইসলামের ইতিহাসে “মুজিজা” হিসেবে স্বীকৃত। কী ছিল সেই দোয়া? কখন, কীভাবে এটি পাঠ করেছিলেন নবিজি (সা.)? জানুন কুরআন-হাদিসের আলোকে।
ঘটনার পটভূমি:
হাদিসের বর্ণনা অনুযায়ী, মদিনায় একবার ভয়াবহ খরা দেখা দেয়। গবাদিপশু মারা যাচ্ছে, ফসল নষ্ট হচ্ছে। সাহাবায়ে কেরাম নবিজি (সা.)-এর কাছে বৃষ্টির জন্য দোয়া চাইলেন। তিনি জনসাধারণকে নিয়ে খোলা মাঠে গিয়ে বিশেষ নামাজ (ইসতিসকার নামাজ) আদায় করেন এবং হাত উঠিয়ে দোয়া করেন।
দোয়াটি কী ছিল?
আরবি:
اللَّهُمَّ اسْقِنَا غَيْثًا مُغِيثًا مَرِيئًا مَرِيعًا، نَافِعًا غَيْرَ ضَارٍّ، عَاجِلًا غَيْرَ آجِلٍ
বাংলা উচ্চারণ:
“আল্লাহুম্মা সক্বিনা গাইসান মুগিসান মারিআন মারীয়া, নাফিআন গাইরা দাররিন, আজিলান গাইরা আজিলিন।”
অর্থ: “হে আল্লাহ! আমাদের এমন বৃষ্টি দান করুন, যা তৃষ্ণা মেটায়, স্বাস্থ্যকর, উপকারী, ক্ষতির কারণ নয় এবং তাড়াতাড়ি আসে, বিলম্বিত হয় না।”
দোয়ার পর কী ঘটেছিল?
ইমাম তিরমিজি (রহ.)-এর বর্ণনায় এসেছে, দোয়া শেষ হওয়ার আগেই মেঘে ঢেকে যায় আকাশ। প্রবল বৃষ্টিতে ভেসে যায় মদিনা। নবিজি (সা.)-এর চাদরও ভিজে যায়! সাহাবি আনাস (রা.) বলেন, “ওই বৃষ্টি টানা সাত দিন চলেছিল।” পরের শুক্রবার মানুষ আবার অভিযোগ করলেন: “বৃষ্টিতে ঘরবাড়ি ভেসে যাচ্ছে!” তখন নবিজি (সা.) নতুন দোয়া করেন, এবং বৃষ্টি সরে যায় মদিনার বাইরে।
কোথায় পড়বেন এই দোয়া?
- খরা বা প্রয়োজনের সময়:যেকোনো জায়গায় নামাজের পর হাত তুলে দোয়া করুন।
- ইসতিসকার নামাজ:জামাতের সঙ্গে দুই রাকাত নামাজ আদায় করে দোয়া করা সুন্নত।
আজকের প্রেক্ষাপটে শিক্ষা:
ইসলামিক স্কলার ড. খালিদ মাহমুদের মতে, “এই ঘটনা শেখায়—আল্লাহর কাছে সরলভাবে চাইলে তিনি অবশ্যই সাড়া দেন। দোয়ার সঙ্গে প্রাকৃতিক নিয়ম মেনে চলাও জরুরি।”
সচরাচর জিজ্ঞাসা (FAQ):
প্রশ্ন: দোয়া পাঠের পর বৃষ্টি না এলে কী করব?
উত্তর: ধৈর্য ধরে আবার দোয়া করুন। আল্লাহর সময় ও হিকমত আমাদের জ্ঞানের ঊর্ধ্বে।
প্রশ্ন: এই দোয়া ছাড়া অন্য কোনো দোয়া আছে কি?
উত্তর: হ্যাঁ, “আল্লাহুম্মা আক্বিনা বি-হাররিকা” বা সূরা ইখলাস পাঠ করেও বৃষ্টির দোয়া করা যায়।