ঢাকা , শনিবার, ১০ মে ২০২৫, ২৭ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনামঃ
“মডেল মেঘনা আলম কেন পুলিশ হেফাজতে? জানালেন পুলিশ কর্মকর্তা” “মুঠোফোন চেয়ে নারীর হাতে অজ্ঞান যুবক, লুট ১ লাখ টাকা” কানটুপি পরে নামাজ আদায় করা যাবে কি? ইসলাম কী বলে? ইসলামে ঐক্যের গুরুত্ব: কোরআন-হাদিসের আলোকে সমাজ গঠনের মূলমন্ত্র দাফনের পর সম্মিলিত দোয়া: ইসলামের নির্দেশনা কী? ফরজ গোসল ছাড়াই সেহরি খাওয়া যাবে? জেনে নিন ইসলামি বিধান ইস্তেখারার দোয়া দেখে পড়া যাবে কি? জেনে নিন ইসলামের নির্দেশনা কেটে ফেলা চুল-নখ কোথায় ফেলবেন? ধর্ম, সংস্কৃতি ও পরিবেশবান্ধব সমাধান সূর্যাস্তের সময় তাওয়াফের নামাজ আদায় করা যাবে? ইসলামিক স্কলারদের ব্যাখ্যা মৃত বাবা-মাকে স্বপ্নে দেখলে যা করবেন: মনোবিদ ও ধর্মীয় বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ
নোটিশঃ
সকাল হোক সত্য খবর দিয়ে । দেশ - বিদেশের সর্বশেষ খবর সবার আগে পেতে সকালের বার্তা এর সাথেই থাকুন ।

দাফনের পর সম্মিলিত দোয়া: ইসলামের নির্দেশনা কী?

মৃত ব্যক্তিকে দাফনের পর পরিবার-স্বজন ও পরিচিতদের সম্মিলিত দোয়ার প্রথা বাংলাদেশে প্রচলিত। তবে ইসলামী শরিয়তের দৃষ্টিতে এই প্রথা কতটা গ্রহণযোগ্য? কোরআন-হাদিস ও ইসলামিক স্কলারদের মতামত নিয়ে তৈরি হয়েছে এই প্রতিবেদন।

ইসলামে দাফন-পরবর্তী দোয়ার বিধান

ইসলামে মৃত্যু পরবর্তী করণীয় বিষয়ে স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে:

  • জানাযার নামাজ:মৃত ব্যক্তির জন্য একবার জানাযার নামাজ পড়া ফরজে কিফায়া। এটি দাফনের আগেই পড়তে হয়।
  • কবর জিয়ারত:দাফনের পর কবর জিয়ারত করা এবং মৃতের জন্য দোয়া করা সুন্নত। নবীজি (সা.) বলেছেন, তোমরা কবরস্থান পরিদর্শন করো, কারণ তা পরকালের স্মরণ করিয়ে দেয়।” (মুসলিম: ৯৭৬)।
  • ব্যক্তিগত দোয়া:আত্মীয়-স্বজন আলাদাভাবে মৃতের জন্য দোয়া করতে পারেন, যা সর্বোত্তম ইবাদত।

সম্মিলিত দোয়া: শরিয়তের দৃষ্টিতে

দাফনের পর সবাই মিলে জমায়েত হয়ে বিশেষ দোয়া বা মোনাজাতের কোনো ভিত্তি ইসলামে নেই।

  • বিধান:হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, নবীজি (সা.) দাফন শেষে উপস্থিত সবাইকে তিনবার বলতেন, তোমাদের ভাইয়ের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করো এবং দৃঢ় থাকার দোয়া করো, কেননা সে এখন জিজ্ঞাসাবাদের সম্মুখীন।” (আবু দাউদ: ৩২২১)। তবে এটি কোনো সম্মিলিত অনুষ্ঠান নয়, বরং উপদেশমূলক বক্তব্য।
  • সতর্কতা:সম্মিলিত দোয়াকে যদি নিয়মিত প্রথা বা ফরজ মনে করা হয়, তা বিদআত (নব উদ্ভাবিত আমল) হিসেবে গণ্য হতে পারে।

প্রচলিত প্রথা vs সুন্নত

  • প্রচলিত প্রথা:দাফনের পর মাঠে/বাড়িতে সবাই মিলে দোয়ার মাহফিল, কুলখানি, বা সুরা ইয়াসিনের বিশেষ মজলিস।
  • সুন্নত পদ্ধতি:
    ১. দাফন শেষে উপস্থিতরা পৃথকভাবে মৃতের জন্য দোয়া করুন।
    ২. কবরে পানি দেওয়া ও কবর মজবুত করা।
    ৩. পরবর্তী তিন দিনে আত্মীয়-স্বজনকে খাওয়ানো (তা মুস্তাহাব, তবে বাধ্যতামূলক নয়)।

ইসলামিক ফাউন্ডেশনের নির্দেশনা

ঢাকার ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মুফতি মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, “দাফন শেষে সম্মিলিত দোয়া ইসলামে নেই। তবে কেউ পৃথকভাবে দোয়া করলে সওয়াব পাবেন। বাড়িতে কুলখানি বা অন্যান্য অনুষ্ঠান করা গুনাহের কাজ নয়, যদি তা শরিয়তের সীমা লঙ্ঘন না করে।”

সচরাচর জিজ্ঞাসা

প্রশ্ন: দাফনের পর সুরা ইয়াসিন পড়া কি জায়েজ?
উত্তর: হ্যাঁ, তবে তা বিশেষ মজলিসের মাধ্যমে নয়। ব্যক্তিগতভাবে পড়লে সওয়াব পাবেন।

প্রশ্ন: কবরে ফুল দেওয়া যাবে?
উত্তর: ইসলামে কবরকে ঘরসজ্জার মতো সাজানো নিষেধ। সাধারণভাবে পানি দেওয়াই উত্তম।

শিশুদের বোঝার ভাষায়

প্রশ্ন: দাদুকে দাফনের পর সবাই মিলে দোয়া করছে, এটা কি ঠিক?
উত্তর: ইসলাম শেখায়, দাদুর জন্য আলাদা আলাদা দোয়া করাই ভালো। যেমন তুমি স্কুলে পরীক্ষার আগে যেমন নীরবে দোয়া করো!

বিশেষজ্ঞ পরামর্শ

  • ইসলামিক স্কলার ড. মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ:“মৃতের জন্য দোয়া সর্বদা করবেন, তবে শরিয়তবহির্ভূত অনুষ্ঠান এড়িয়ে চলুন।”
  • সামাজিক প্রথা:সম্মিলিত দোয়াকে সামাজিক শোক প্রকাশের মাধ্যম মনে করা হয়, যা ইসলামে নিষিদ্ধ নয় যদি তা শরিয়তের পরিপন্থী না হয়।

উপসংহার

ইসলামে মৃতের জন্য দোয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত, তবে তা নির্দিষ্ট নিয়মে ও নিয়তের সাথে করা জরুরি। সম্মিলিত অনুষ্ঠানের চেয়ে ব্যক্তিগত দোয়া ও সদকায়ে জারিয়ার মাধ্যমে মৃতের আত্মার মাগফিরাত কামনা করুন। মনে রাখবেন, সরল সুন্নতই সর্বোত্তম পথ।

আপলোডকারীর তথ্য

মিজানুর রহমান হৃদয়

মিজানুর রহমান হৃদয় বাংলাদেশের একজন তরুন লেখক, তিনি এখন পর্যন্ত ৪ টি বই প্রকাশ করেছেন । ২০১৭ থেকে ২০২৫ চলতি বছর সে বেশ কিছু পত্র - পত্রিকায় কাজ করে আসছেন । আর আমাদের সকালের বার্তা'র বিশেষ প্রতিনিধি হিসেবেও কাজ করছেন ।
জনপ্রিয় বার্তা

“মডেল মেঘনা আলম কেন পুলিশ হেফাজতে? জানালেন পুলিশ কর্মকর্তা”

দাফনের পর সম্মিলিত দোয়া: ইসলামের নির্দেশনা কী?

আপডেট সময় ০৫:১৪:০৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১১ এপ্রিল ২০২৫

মৃত ব্যক্তিকে দাফনের পর পরিবার-স্বজন ও পরিচিতদের সম্মিলিত দোয়ার প্রথা বাংলাদেশে প্রচলিত। তবে ইসলামী শরিয়তের দৃষ্টিতে এই প্রথা কতটা গ্রহণযোগ্য? কোরআন-হাদিস ও ইসলামিক স্কলারদের মতামত নিয়ে তৈরি হয়েছে এই প্রতিবেদন।

ইসলামে দাফন-পরবর্তী দোয়ার বিধান

ইসলামে মৃত্যু পরবর্তী করণীয় বিষয়ে স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে:

  • জানাযার নামাজ:মৃত ব্যক্তির জন্য একবার জানাযার নামাজ পড়া ফরজে কিফায়া। এটি দাফনের আগেই পড়তে হয়।
  • কবর জিয়ারত:দাফনের পর কবর জিয়ারত করা এবং মৃতের জন্য দোয়া করা সুন্নত। নবীজি (সা.) বলেছেন, তোমরা কবরস্থান পরিদর্শন করো, কারণ তা পরকালের স্মরণ করিয়ে দেয়।” (মুসলিম: ৯৭৬)।
  • ব্যক্তিগত দোয়া:আত্মীয়-স্বজন আলাদাভাবে মৃতের জন্য দোয়া করতে পারেন, যা সর্বোত্তম ইবাদত।

সম্মিলিত দোয়া: শরিয়তের দৃষ্টিতে

দাফনের পর সবাই মিলে জমায়েত হয়ে বিশেষ দোয়া বা মোনাজাতের কোনো ভিত্তি ইসলামে নেই।

  • বিধান:হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, নবীজি (সা.) দাফন শেষে উপস্থিত সবাইকে তিনবার বলতেন, তোমাদের ভাইয়ের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করো এবং দৃঢ় থাকার দোয়া করো, কেননা সে এখন জিজ্ঞাসাবাদের সম্মুখীন।” (আবু দাউদ: ৩২২১)। তবে এটি কোনো সম্মিলিত অনুষ্ঠান নয়, বরং উপদেশমূলক বক্তব্য।
  • সতর্কতা:সম্মিলিত দোয়াকে যদি নিয়মিত প্রথা বা ফরজ মনে করা হয়, তা বিদআত (নব উদ্ভাবিত আমল) হিসেবে গণ্য হতে পারে।

প্রচলিত প্রথা vs সুন্নত

  • প্রচলিত প্রথা:দাফনের পর মাঠে/বাড়িতে সবাই মিলে দোয়ার মাহফিল, কুলখানি, বা সুরা ইয়াসিনের বিশেষ মজলিস।
  • সুন্নত পদ্ধতি:
    ১. দাফন শেষে উপস্থিতরা পৃথকভাবে মৃতের জন্য দোয়া করুন।
    ২. কবরে পানি দেওয়া ও কবর মজবুত করা।
    ৩. পরবর্তী তিন দিনে আত্মীয়-স্বজনকে খাওয়ানো (তা মুস্তাহাব, তবে বাধ্যতামূলক নয়)।

ইসলামিক ফাউন্ডেশনের নির্দেশনা

ঢাকার ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মুফতি মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, “দাফন শেষে সম্মিলিত দোয়া ইসলামে নেই। তবে কেউ পৃথকভাবে দোয়া করলে সওয়াব পাবেন। বাড়িতে কুলখানি বা অন্যান্য অনুষ্ঠান করা গুনাহের কাজ নয়, যদি তা শরিয়তের সীমা লঙ্ঘন না করে।”

সচরাচর জিজ্ঞাসা

প্রশ্ন: দাফনের পর সুরা ইয়াসিন পড়া কি জায়েজ?
উত্তর: হ্যাঁ, তবে তা বিশেষ মজলিসের মাধ্যমে নয়। ব্যক্তিগতভাবে পড়লে সওয়াব পাবেন।

প্রশ্ন: কবরে ফুল দেওয়া যাবে?
উত্তর: ইসলামে কবরকে ঘরসজ্জার মতো সাজানো নিষেধ। সাধারণভাবে পানি দেওয়াই উত্তম।

শিশুদের বোঝার ভাষায়

প্রশ্ন: দাদুকে দাফনের পর সবাই মিলে দোয়া করছে, এটা কি ঠিক?
উত্তর: ইসলাম শেখায়, দাদুর জন্য আলাদা আলাদা দোয়া করাই ভালো। যেমন তুমি স্কুলে পরীক্ষার আগে যেমন নীরবে দোয়া করো!

বিশেষজ্ঞ পরামর্শ

  • ইসলামিক স্কলার ড. মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ:“মৃতের জন্য দোয়া সর্বদা করবেন, তবে শরিয়তবহির্ভূত অনুষ্ঠান এড়িয়ে চলুন।”
  • সামাজিক প্রথা:সম্মিলিত দোয়াকে সামাজিক শোক প্রকাশের মাধ্যম মনে করা হয়, যা ইসলামে নিষিদ্ধ নয় যদি তা শরিয়তের পরিপন্থী না হয়।

উপসংহার

ইসলামে মৃতের জন্য দোয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত, তবে তা নির্দিষ্ট নিয়মে ও নিয়তের সাথে করা জরুরি। সম্মিলিত অনুষ্ঠানের চেয়ে ব্যক্তিগত দোয়া ও সদকায়ে জারিয়ার মাধ্যমে মৃতের আত্মার মাগফিরাত কামনা করুন। মনে রাখবেন, সরল সুন্নতই সর্বোত্তম পথ।