মাসকাট, ওমান: বিদেশি কর্মীদের জন্য ন্যূনতম মাসিক মজুরি ৪০০ ওমানি রিয়াল (প্রায় ১ লক্ষ ৪ হাজার টাকা) নির্ধারণ করেছে ওমান সরকার। গতকাল বৃহস্পতিবার (২৭ মার্চ ২০২৫) শ্রম মন্ত্রণালয়ের এক জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে এই ঘোষণা দেওয়া হয়। নতুন এই নিয়ম আগামী ১ মে ২০২৫ থেকে কার্যকর হবে এবং হোটেল, কনস্ট্রাকশন, ক্লিনিংসহ সকল প্রাইভেট সেক্টরের কর্মীদের জন্য প্রযোজ্য।
কী বলছে নতুন নিয়ম?
শ্রম মন্ত্রী ড. খালিদ আল হোসনির স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে:
১. মজুরি কাঠামো: কোনো কর্মীকে এর কম বেতনে নিয়োগ দেওয়া যাবে না। বর্তমান ন্যূনতম মজুরি ২৫০ রিয়াল থেকে বাড়িয়ে ৪০০ রিয়াল করা হলো।
২. সবার জন্য প্রযোজ্য: বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, ফিলিপাইনের মতো সকল দেশের কর্মীদের ক্ষেত্রে এই নিয়ম সমানভাবে প্রযোজ্য।
৩. অবসর ভাতা ও স্বাস্থ্যসুবিধা: মজুরি বাড়ার পাশাপাশি কর্মীদের জন্য বাধ্যতামূলক বীমা ও বার্ষিক ছুটির দিন বাড়ানোর কথাও ভাবছে সরকার।
“ন্যায্য মজুরি মৌলিক অধিকার”: মন্ত্রী
সংবাদ সম্মেলনে ড. আল হোসনি বলেন, “ওমানের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিদেশি কর্মীদের অবদান অপরিসীম। তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন ও শোষণ রোধ করাই এই সিদ্ধান্তের মূল লক্ষ্য।” তিনি আরও জানান, নতুন নিয়ম ভাঙলে নিয়োগকর্তাদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কর্মীদের প্রতিক্রিয়া:
মাসকাটের একটি কনস্ট্রাকশন সাইটে কাজ করা বাংলাদেশি কর্মী রাশেদ মিয়া বলেন, “এখন প্রতি মাসে বাড়িতে বেশি টাকা পাঠাতে পারব। সত্যি হলে এই ঘোষণা আমাদের জন্য স্বপ্নপূরণের মতো।”
ফিলিপাইনের এক হোটেল কর্মী লিনা ক্রুজ বলেন, “আমরা বছর ধরে দাবি জানাচ্ছিলাম, শেষতক সাড়া মিলল!”
কীভাবে বাস্তবায়ন হবে?
- শ্রম মন্ত্রণালয় ইতিমধ্যে একটি মনিটরিং সেল চালু করেছে, যারা বেতন কাঠামো তদারকি করবে।
- অভিযোগ দাখিলের জন্য চালু করা হয়েছে ২৪/৭ হেল্পলাইন (+৯৬৮-XXXX-XXXX) এবং মোবাইল অ্যাপ “Oman Labor Care”।
- নিয়োগকর্তাদের আগামী ৩০ দিনের মধ্যে কর্মীদের সাথে নতুন চুক্তি নবায়নের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
নিয়োগকর্তাদের উদ্বেগ:
কিছু ব্যবসায়ী অভিযোগ করেন, মজুরি বাড়ায় উৎপাদন খরচ বেড়ে যাবে। একটি রেস্তোরাঁর মালিক আলী আল-হার্থি বলেন, “সরকার যদি কর ছাড় বা ঋণের সুযোগ দেয়, তাহলে আমরা এই পরিবর্তন মেনে নিতে পারব।”
পরিশেষে:
এই সিদ্ধান্তকে মধ্যপ্রাচ্যে কর্মরত প্রবাসীদের জন্য “ঐতিহাসিক বিজয়” বলে মনে করছেন শ্রম অধিকার কর্মীরা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ওমানের এই পদক্ষেপ পার্শ্ববর্তী দেশগুলোকেও ন্যূনতম মজুরি বাড়ানোর চাপে ফেলতে পারে।