“বয়স বাড়লে মেয়েদের চাহিদা কমে”—এই ধারণা সমাজে প্রচলিত থাকলেও বিজ্ঞান ও বাস্তবতা ভিন্ন কথা বলে। মেয়েদের শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক চাহিদা বয়সের সঙ্গে কীভাবে বদলায়? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগ ও জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের গবেষণা বলছে, নারীর চাহিদা কখনোই বয়সের গণ্ডিতে আবদ্ধ নয়। চলুন জেনে নিই এই বিষয়ে বিজ্ঞান, সমাজ ও নারীদের নিজস্ব মতামত।
১. শারীরিক চাহিদা: বয়সই কি শেষ কথা?
শারীরিক চাহিদার ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের ব্যাখ্যা স্পষ্ট:
- প্রজনন স্বাস্থ্য:সচরাচর ১২-৫০ বছর বয়সে মেয়েদের প্রজনন ক্ষমতা সক্রিয় থাকে। তবে মেনোপজ (৫০-৫৫ বছর) পরেও শারীরিক ঘনিষ্ঠতার ইচ্ছা থাকতে পারে।
- হরমোনের ভূমিকা:এস্ট্রোজেন হরমোনের মাত্রা বয়সের সঙ্গে কমলেও মানসিক ইচ্ছা ব্যক্তিভেদে আলাদা। গাইনোকোলজিস্ট ডা. তাহমিনা আহমেদ বলেন, “শারীরিক চাহিদা শুধু বয়স নয়, সম্পর্কের মান ও স্বাস্থ্যের উপর নির্ভর করে।”
২. মানসিক চাহিদা: বয়স বাড়লেই কি শেষ?
মানসিক চাহিদা বয়সের সঙ্গে বদলায়, কমে না:
- যৌবনে:প্রেম, ক্যারিয়ার, স্বাধীনতা নিয়ে স্বপ্ন দেখা।
- মাঝবয়সে:স্থিতিশীলতা, পরিবারের নিরাপত্তা, নিজের পরিচয় রক্ষা।
- বৃদ্ধ বয়সে:সঙ্গীর সান্নিধ্য, সম্মান ও যত্ন পাওয়া।
মনোবিদ ড. ফারহানা ইসলামের মতে, “৬০ বছর বয়সেও নারীরা নতুন হবি, ভ্রমণ বা সামাজিক কাজে আগ্রহী হন। চাহিদা বদলে যায়, লোপ পায় না।”
৩. সমাজের চোখে: “বয়সের সময়সীমা”
সমাজের রূঢ় বাস্তবতা হলো:
- বিয়ের বাজার:২৫-৩০ বছরের মধ্যে মেয়েদের বিয়ে দেওয়ার চাপ। ৩০ পার হলে “অপারগ” মনে করা হয়।
- ক্যারিয়ার:অনেক কর্মক্ষেত্রে যুবতীদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়।
- সৌন্দর্যের মাপকাঠি:ত্বক-চুলের যত্নকে “যৌবনের” সঙ্গে জুড়ে দেখা।
৪. তথ্য-উপাত্ত: বাংলাদেশের চিত্র
- গড় বিয়ের বয়স:নারীর ১৮.৫ বছর (বিএসসি, ২০২৩)।
- কর্মজীবী নারী:৩৫-৪৫ বছর বয়সী নারীরা কর্মক্ষেত্রে সবচেয়ে সক্রিয় (শ্রম জরিপ, ২০২২)।
- সৃজনশীলতা:৫০ ঊর্ধ্ব ৪০% নারী শিল্প, লেখালেখি বা সমাজসেবায় যুক্ত।
৫. ভুল ধারণা vs বাস্তবতা
- মিথ:“৩০ পেরোলেই মেয়েরা আকর্ষণ হারায়।”
- বাস্তবতা:আত্মবিশ্বাস ও ব্যক্তিত্বই আসল আকর্ষণ। বলিউড অভিনেত্রী দীপিকা পাড়ুকোন (৩৮) বা বাংলাদেশের নুসরাত ইমরোজ তিশা (৪০) এর জনপ্রিয়তা তার প্রমাণ।
- মিথ:“বৃদ্ধ বয়সে নারীরা একা থাকতে চান।”
- বাস্তবতা:বয়স্ক নারীরাও সঙ্গ চান, কিন্তু সমাজে তা প্রকাশের সুযোগ কম।
৬. নারীদের কণ্ঠে: “চাহিদা কখনো মরে না”
শর্মিলা ঠাকুর (৪৫), ব্যবসায়ী: “একা থাকি, কিন্তু ট্রাভেল, পড়াশোনা করতে ভালোবাসি। বয়স শুধু সংখ্যা।”
নাজমা আক্তার (৬০), সমাজকর্মী: “গ্রামে বিধবা বলে চাহিদা প্রকাশ করতে দোষ দেওয়া হয়। কিন্তু আমি এখনও কমিউনিটির জন্য কাজ করতে চাই।”
৭. বিশেষজ্ঞ পরামর্শ: চাহিদাকে সম্মান দিন
- পরিবারকে বলুন:বয়স দিয়ে নারীর ইচ্ছাকে অবহেলা করবেন না।
- স্বাস্থ্য সচেতনতা:নিয়মিত চেকআপ, ব্যায়াম ও পুষ্টিকর খাবার চাহিদা পূরণে সাহায্য করে।
- সমাজ বদলান:বয়স্ক নারীদের দক্ষতা ও অভিজ্ঞতাকে মূল্য দিন।
শিশুদের জন্য সহজ ব্যাখ্যা
প্রশ্ন: মেয়েদের চাহিদা কি বয়স বাড়লে শেষ হয়ে যায়?
উত্তর: না! ঠিক যেমন তুমি ছোটবেলায় খেলতে চাও, বড় হলে পড়তে চাও—মেয়েরাও বয়স বাড়লে নতুন কিছু চায়। শুধু চাওয়াগুলো বদলে যায়।
উপসংহার
নারীর চাহিদা কোনো পণ্য নয়, যা বয়সের স্ট্যাম্প মেরে দেওয়া যায়। এটি জীবনের প্রতি আগ্রহ, যা কিনা শেষ হয় শ্বাস-প্রশ্বাসের সঙ্গে। আসুন, বয়সের সংখ্যাকে না দেখে নারীর ইচ্ছাকে সম্মান করি।