বাংলাদেশের সমাজে মেয়েদের বিয়ের বয়সকে ঘিরে রয়েছে নানা প্রত্যাশা ও চাপ। অনেক পরিবারে ২২ বছরের মধ্যে মেয়ের বিয়ে না হলে তাকে “সময় পার” বা “বুড়ো” বলে ট্যাগ দেওয়া হয়। কিন্তু এই চাপ শুধু সামাজিক নয়, এর পেছনে কাজ করে অর্থনৈতিক নিরাপত্তাহীনতা, শিক্ষার অভাব এবং পুরনো রীতিনীতি। চলুন জেনে নিই কী কী চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হন মেয়েরা এবং এর থেকে বেরোনোর উপায়।
১. সামাজিক চাপ ও মানসিক স্বাস্থ্যের সমস্যা
- সমালোচনা:আত্মীয়-প্রতিবেশীরা প্রায়ই প্রশ্ন তোলেন, “মেয়ের বয়স হচ্ছে, বিয়ে দিবেন না?” এই ধরনের মন্তব্য মেয়েটির আত্মবিশ্বাস কমিয়ে দেয়।
- মানসিক চাপ:উদ্বেগ, হতাশা বা নিজেকে অসহায় মনে করার প্রবণতা বাড়ে। মনোবিদ ড. ফারহানা ইসলাম বলেন, “অকালে বিয়ের চাপ মেয়েদের মানসিক বিকাশে বাধা দেয়। অনেকেই আত্মহত্যার কথাও ভাবেন।”
২. শিক্ষা ও ক্যারিয়ারে বাধা
- অধিকাংশ পরিবারে অগ্রাধিকার তা বিয়েকে:অনেক মেয়েকে কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি না করিয়ে বিয়ের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত রাখা হয়।
- চাকরিতে বৈষম্য:কর্মক্ষেত্রে বিবাহিত মহিলাদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয় বলে অনেকেই মনে করেন, যা অবিবাহিত মেয়েদের চাকরির সুযোগ কমিয়ে দেয়।
৩. আর্থিক অনিশ্চয়তা
- নিজের আয় না থাকা:পরিবারের উপর নির্ভরশীলতা বাড়ে। বাবা-মায়ের মৃত্যুর পর অনেকেই আর্থিক সংকটে পড়েন।
- সম্পত্তির অধিকার:অবিবাহিত মেয়েরা পরিবারের সম্পত্তিতে দাবি রাখলেও সামাজিকভাবে তা প্রায়ই অস্বীকার করা হয়।
৪. স্বাস্থ্য সম্পর্কে ভুল ধারণা
- গবেষণা বলছে:২২ বছর বয়সের পর গর্ভধারণ করলে মা ও শিশুর স্বাস্থ্যঝুঁকি কমে। কিন্তু সমাজে প্রচলিত আছে, “বয়স বাড়লে সন্তান নিতে সমস্যা হয়।”
- চিকিৎসকের মত:গাইনোকোলজিস্ট ডা. তানজিনা হোসেন বলেন, “৩৫ বছরের আগে মা হওয়াই নিরাপদ। বয়স বাড়লেই সন্তানধারণে অক্ষম হওয়ার ধারণা ভুল।”
৫. আইনি সুরক্ষার অভাব
বাংলাদেশে বিয়ের ন্যূনতম বয়স মেয়েদের ১৮ বছর। কিন্তু ২২ বছরের পরও বিয়ে না হলে কোনো আইনি সুরক্ষা নেই। পারিবারিক সহিংসতা বা জোরপূর্বক বিয়ের শিকার হলে আইনি সহায়তা নেওয়া যায়, তবে সচেতনতার অভাব থাকে।
কীভাবে মোকাবিলা করবেন?
- শিক্ষা ও অর্থনৈতিক স্বাধীনতা:চাকরি বা ব্যবসার মাধ্যমে আয় করুন। নারী উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে ঋণ সুবিধা নিন।
- মনোবিদের সাহায্য:মানসিক চাপে থাকলে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট (০৯৬১১৬৭৭৭৭৭) এ যোগাযোগ করুন।
- আইনি পরামর্শ:জোরপূর্বক বিয়ে বা সম্পত্তির অধিকার নিয়ে সমস্যায় আইন ও সালিশ কেন্দ্র (০১৭১৫-৬৬৫৭৮৪) এ ফোন করুন।
সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে যা করণীয়
- সচেতনতা বাড়ান:স্কুল-কলেজে সেমিনারের মাধ্যমে বিয়ের সঠিক বয়স সম্পর্কে জানান।
- মিডিয়ার ভূমিকা:নাটক-সিনেমায় অবিবাহিত নারীর সফল চরিত্র উপস্থাপন করুন।
- পুরুষের অংশগ্রহণ:ছেলেদেরও বিয়ের বয়স নিয়ে সচেতন করতে পরিবারকে এগিয়ে আসতে হবে।
উপসংহার
বিয়ের বয়স কোনো রেস নয়। প্রতিটি মেয়ের নিজের পায়ে দাঁড়ানোর এবং স্বপ্ন পূরণের অধিকার আছে। সমাজের চাপ নয়, নিজের সিদ্ধান্তই হওয়া উচিত জীবনের গতি নির্ধারণের মূল হাতিয়ার।