কুয়েতের ইঞ্জিনিয়ারিং খাতে বাংলাদেশি পেশাজীবীদের সংখ্যা গত ৫ বছরে প্রায় ৪০% কমেছে। সরকারি তথ্য ও স্থানীয় বাংলাদেশি কমিউনিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২০ সালে যেখানে ৮,০০০ বাংলাদেশি ইঞ্জিনিয়ার কুয়েতে কর্মরত ছিলেন, ২০২৫ সালে তা নেমে দাঁড়িয়েছে ৪,৮০০-এ। দক্ষতা যাচাইয়ের কঠোর নীতি, বেতন বৈষম্য এবং প্রতিযোগিতামূলক বাজারে অন্যান্য দেশের ইঞ্জিনিয়ারদের প্রাধান্যকে এই পতনের প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
কেন কমছে বাংলাদেশি ইঞ্জিনিয়ার?
১. দক্ষতার অভাব: কুয়েত এখন শুধুমাত্র উচ্চশিক্ষিত ও অভিজ্ঞ ইঞ্জিনিয়ারদের ভিসা দিচ্ছে। বাংলাদেশের অনেক ইঞ্জিনিয়ারের প্রয়োজনীয় সার্টিফিকেশন ও ভাষাগত দক্ষতা নেই।
২. বেতন বৈষম্য: একই পদে ভারতীয় বা ফিলিপিনো ইঞ্জিনিয়ারদের চেয়ে বাংলাদেশিদের বেতন ২০-৩০% কম।
৩. ভিসা জটিলতা: ইঞ্জিনিয়ারিং ভিসার জন্য আবেদন প্রক্রিয়া সময়সাপেক্ষ এবং ব্যয়বহুল।
কুয়েত ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আহমেদ আল-সাবাহ বলেন,
“কুয়েতের নির্মাণখাত এখন উচ্চপ্রযুক্তিনির্ভর। আমরা চাই, বিদেশি ইঞ্জিনিয়ারদের মধ্যে যারা আপ টু ডেট, তারাই আসুক। বাংলাদেশিদের অনেকেই এই মানদণ্ড পূরণ করতে পারছেন না।”
বাংলাদেশি ইঞ্জিনিয়ারদের প্রতিক্রিয়া
রিয়াদের একটি কনস্ট্রাকশন ফার্মে কর্মরত সিভিল ইঞ্জিনিয়ার তানভীর হোসেন বলেন,
“২০২০ সালে এসেছিলাম। তখন মাসিক বেতন ছিল ১,২০০ কুয়েতি দিনার। এখন নতুন ইঞ্জিনিয়াররা পাচ্ছেন মাত্র ৮০০ দিনার। বাড়ি ভাড়া, খরচ বাড়ায় টিকিয়ে থাকা কঠিন।”
ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার নুসরাত জাহান বলেন,
“ভারতীয়দের আইইল্টস স্কোর বেশি থাকে। তাদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। আমাদের অনেকেরই ইংরেজি দুর্বল।”
সরকার ও দূতাবাসের পদক্ষেপ
বাংলাদেশ দূতাবাস কুয়েত ইঞ্জিনিয়ারদের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করছে:
- কুয়েতি ভাষা কোর্স:আরবি ভাষা শেখানো হবে বিনামূল্যে।
- প্রযুক্তিগত প্রশিক্ষণ:BIM, AutoCAD-এ দক্ষতা উন্নয়নে ওয়ার্কশপ।
- নিয়োগ মেলার আয়োজন:কুয়েতি কোম্পানির সাথে সরাসরি যোগাযোগের সুযোগ।
দূতাবাসের শ্রম কাউন্সিলর মো. রফিকুল ইসলাম বলেন,
“ইঞ্জিনিয়ারদের দক্ষতা উন্নয়নে আমরা কুয়েত সরকারের সাথে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি। আগামী ২ বছরে ২,০০০ ইঞ্জিনিয়ারকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার লক্ষ্য রয়েছে।”
অন্যান্য দেশের চাহিদা
বাংলাদেশি ইঞ্জিনিয়াররা এখন কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও মালয়েশিয়ার দিকে ঝুঁকছেন। এসব দেশে:
- বেতন বেশি:গড়ে মাসিক ৩,০০০-৫,০০০ ডলার।
- স্থায়ী বসবাসের সুযোগ:স্কিল্ড মাইগ্রেশন ভিসার মাধ্যমে পরিবার নিয়ে থাকা যায়।
ভবিষ্যৎ কী বলে বিশেষজ্ঞরা?
অর্থনীতিবিদ ড. ফারহানা তাসনিমের মতে,
“কুয়েতের বাজারে টিকতে হলে বাংলাদেশিদের প্রযুক্তিগত ও ভাষাগত দক্ষতা বাড়াতে হবে। সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে বিশ্বমানের প্রশিক্ষণ জরুরি।”
শেষ কথা
কুয়েতের ইঞ্জিনিয়ারিং খাতে বাংলাদেশিদের অংশগ্রহণ বাড়াতে হলে প্রতিযোগিতার সাথে তাল মিলিয়ে দক্ষতা বৃদ্ধিই একমাত্র উপায়। সময় থাকতে ব্যবস্থা না নিলে এই বাজার সম্পূর্ণ হারানোর শঙ্কা রয়েছে।
যোগাযোগ:
- বাংলাদেশ দূতাবাস, কুয়েত: +৯৬৫ ২২২৫ ০০৪৪ | ওয়েবসাইট:bdembassykuwait.org
- কুয়েত ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যাসোসিয়েশন:kea.kw