মানুষের শরীরে হাড়ের সংখ্যা নিয়ে কৌতূহলের শেষ নেই! জন্মের সময় শিশুর দেহে প্রায় ৩০০টি হাড় থাকে, কিন্তু বড় হওয়ার পর তা কমে দাঁড়ায় ২০৬-এ। তাহলে এই ৯৪টি হাড় হারায় কোথায়? সম্প্রতি ঢাকার একটি স্কুলে পরিচালিত জরিপে দেখা গেছে, ৯৫% শিক্ষার্থী ও অভিভাবক এই প্রশ্নের উত্তর জানেন না। শিশুর হাড়ের এই রহস্যময় “অদৃশ্য হওয়া” আসলে প্রকৃতির একটি চমৎকার প্রক্রিয়া। চলুন জেনে নিই হাড় কমার বিজ্ঞান, এর উপকারিতা এবং মানবদেহের বিস্ময়কর এই পরিবর্তনের গল্প।
১. জন্মের সময় হাড় বেশি থাকে কেন?
শিশুর শরীর নরম ও নমনীয় হয়, যাতে মায়ের পেট থেকে বেরোনো এবং দ্রুত বেড়ে উঠতে সুবিধা হয়। এই ৩০০টি হাড়ের বেশিরভাগই কার্টিলেজ (নরম হাড়) দিয়ে তৈরি, যা ধীরে ধীরে শক্ত হাড়ে (অস্থি) পরিণত হয়। উদাহরণস্বরূপ, শিশুর মাথার খুলি জন্মের সময় ২৯টি আলাদা হাড় থাকে, যা পরবর্তীতে মিলে হয়ে ১টি শক্ত খুলি গঠন করে।
২. বাকি ৯৪টি হাড় গেল কোথায়?
হাড়গুলি একসাথে জোড়া লাগে (ফিউজ)! বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ছোট ছোট হাড়গুলি জোড়া লেগে বড় হাড়ে পরিণত হয়। যেমন:
- মেরুদণ্ড:শিশুর মেরুদণ্ডে ৩৩টি আলাদা হাড় থাকে। বড় হওয়ার পর তা ২৬টিতে দাঁড়ায়।
- হাত-পা:জন্মের সময় হাতের কব্জিতে অনেক ছোট হাড় থাকে, যা পরে ৮টিতে মিলে যায়।
- খুলি:আগেই বলেছি, ২৯টি হাড় মিলে মাত্র ১টি হয়!
এইভাবে শতাধিক হাড় জোড়া লেগে কমতে কমতে প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের দেহে ২০৬টি হাড় থাকে।
৩. হাড় জোড়া লাগার প্রক্রিয়া কী?
জন্মের পর শিশুর হাড়ে থাকা কার্টিলেজ ধীরে ধীরে ক্যালসিয়াম ও অন্যান্য খনিজ শোষণ করে শক্ত হয়। এই প্রক্রিয়াকে বলে অসিফিকেশন। একই সঙ্গে কিছু হাড় একে অপরের সঙ্গে যুক্ত হয়ে বড় আকার পায়। যেমন: থাই-বোন (ফিমার) জন্মের সময় ৩টি অংশে থাকে, যা ১৮ বছর বয়সের মধ্যে জোড়া লেগে ১টি হয়।
৪. হাড় কমলে কী সমস্যা হয়?
বিজ্ঞানীরা বলছেন, হাড় কমা কোনো সমস্যা নয়, বরং প্রকৃতির সুচিন্তিত পরিকল্পনা! কম হাড় মানে দেহের গঠন বেশি মজবুত ও ভারসাম্যপূর্ণ। উদাহরণস্বরূপ:
- হাঁটার সুবিধা:যদি পায়ের সব হাড় আলাদা থাকত, দৌড়ানো বা লাফানোর সময় ভেঙে যাওয়ার ঝুঁকি হতো।
- মস্তিষ্কের সুরক্ষা:খুলির হাড় জোড়া লাগার কারণে মাথায় আঘাত পেলে মস্তিষ্ক নিরাপদ থাকে।
বিশেষজ্ঞদের ব্যাখ্যা
ঢাকা মেডিকেল কলেজের অর্থোপেডিক সার্জন ডা. ফারহানা আক্তার বলেন, “শিশুর হাড় নরম ও নমনীয় হওয়ায় বাড়ন্ত বয়সে তা সহজে বড় হয়। হাড় জোড়া লাগার এই প্রক্রিয়া ১৮-২৫ বছর পর্যন্ত চলতে থাকে। এ সময় ক্যালসিয়ামযুক্ত খাবার খাওয়া জরুরি, যাতে হাড় শক্ত হয়।”
মজার তথ্য
- মানুষের দেহের সবচেয়ে ছোট হাড় হলোস্টেপিস (কানের ভেতরে), যা চালের দানার সমান!
- সবচেয়ে বড় হাড়ফিমার (থাই-বোন), যা একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের দেহে প্রায় ১৯ ইঞ্চি লম্বা হতে পারে।
- শিশুর হাড়ে কার্টিলেজ বেশি থাকায় তারা প্রাপ্তবয়স্কদের চেয়ে দ্রুত সুস্থ হয়।
শিশুদের জন্য টিপস
- দুধ, ডিম, শাকসবজি খাওয়ার অভ্যাস করুন—হাড় শক্ত হবে।
- রোদে খেললে ভিটামিন ডি মেলে, যা হাড় গঠনে সাহায্য করে।
- হাড়ে আঘাত পেলে বাবা-মাকে জানাতে ভুলবেন না!
উপসংহার
প্রকৃতি মানুষের শরীরকে এমনভাবে গড়ে তোলে, যেন প্রতিটি বয়সে তার চাহিদা পূরণ হয়। শিশুর হাড় কমে যাওয়া কোনো “হারিয়ে যাওয়া” নয়, বরং পরিপক্ব হওয়ার লক্ষণ। পরেরবার যখন কোনো শিশুকে দেখবেন, মনে করবেন—তার দেহে এখনই এমন শতাধিক হাড় জোড়া লাগার মহারণ শুরু হয়েছে!