ঢাকা , শনিবার, ১০ মে ২০২৫, ২৭ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনামঃ
“মডেল মেঘনা আলম কেন পুলিশ হেফাজতে? জানালেন পুলিশ কর্মকর্তা” “মুঠোফোন চেয়ে নারীর হাতে অজ্ঞান যুবক, লুট ১ লাখ টাকা” কানটুপি পরে নামাজ আদায় করা যাবে কি? ইসলাম কী বলে? ইসলামে ঐক্যের গুরুত্ব: কোরআন-হাদিসের আলোকে সমাজ গঠনের মূলমন্ত্র দাফনের পর সম্মিলিত দোয়া: ইসলামের নির্দেশনা কী? ফরজ গোসল ছাড়াই সেহরি খাওয়া যাবে? জেনে নিন ইসলামি বিধান ইস্তেখারার দোয়া দেখে পড়া যাবে কি? জেনে নিন ইসলামের নির্দেশনা কেটে ফেলা চুল-নখ কোথায় ফেলবেন? ধর্ম, সংস্কৃতি ও পরিবেশবান্ধব সমাধান সূর্যাস্তের সময় তাওয়াফের নামাজ আদায় করা যাবে? ইসলামিক স্কলারদের ব্যাখ্যা মৃত বাবা-মাকে স্বপ্নে দেখলে যা করবেন: মনোবিদ ও ধর্মীয় বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ
নোটিশঃ
সকাল হোক সত্য খবর দিয়ে । দেশ - বিদেশের সর্বশেষ খবর সবার আগে পেতে সকালের বার্তা এর সাথেই থাকুন ।

মৃত মানুষের নাক-কানে কেন দেওয়া হয় তুলো? রহস্যের পেছনে রয়েছে বৈজ্ঞানিক ও সাংস্কৃতিক কারণ!

মৃত্যুর পর মৃতদেহ সাজানোর সময় নাক ও কানে তুলো দেওয়ার রীতি বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন সংস্কৃতিতে প্রচলিত। অনেকেই মনে করেন, এটি শুধুই একটি প্রথা বা আধ্যাত্মিক বিশ্বাস। কিন্তু এই কাজের পেছনে লুকিয়ে আছে বৈজ্ঞানিক যুক্তি এবং নানান সাংস্কৃতিক ব্যাখ্যা! সম্প্রতি মেডিকেল সাইন্স ও নৃবিজ্ঞান গবেষণার আলোকে জানা গেছে, এই প্রথা শুধু কুসংস্কার নয়, বরং স্বাস্থ্যবিধি ও সম্মান প্রদর্শনের প্রতীক। চলুন জেনে নিই এর পেছনের অজানা কারণগুলো।

১. বৈজ্ঞানিক কারণ: দেহতরল নিয়ন্ত্রণ

মৃত্যুর পর মানবদেহের কোষগুলি ধীরে ধীরে ভেঙে যায়। এ সময় নাক, মুখ বা কান দিয়ে রক্ত, লালা বা অন্যান্য তরল বের হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তুলো ব্যবহারের মূল উদ্দেশ্য হলো দেহতরল যেন বাইরে না ছড়ায় তা নিয়ন্ত্রণ করা। এটি শুধু পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখে না, বরং দেহ সংরক্ষণে সাহায্য করে। ফরেনসিক এক্সপার্ট ডা. সায়েদুর রহমান বলেন, মৃতদেহ দ্রুত পচন শুরু হলে ব্যাকটেরিয়া জন্মায়তুলো ব্যবহারে এই প্রক্রিয়া কিছুটা ধীর হয় এবং দেহ সৎকারের প্রস্তুতিতে সময় পাওয়া যায়।”

২. সাংস্কৃতিক বিশ্বাস: আত্মার শান্তি

  • হিন্দু ধর্ম:বিশ্বাস করা হয়, তুলো আত্মাকে বাইরের নোংরা শক্তি থেকে রক্ষা করে। কানে তুলো দেওয়া হয় যেন আত্মা অশুভ কথা শুনতে না পায়।
  • ইসলাম:ইসলামিক রীতি অনুযায়ী, মৃত্যুর পর দেহ পরিষ্কার করা (গোসল) ফরজ। এই সময় কান-নাকের ভেতরের অংশে পানি প্রবেশ রোধ করতে তুলো ব্যবহার করা হয়।
  • বৌদ্ধ ধর্ম:কিছু সম্প্রদায়ের মতে, তুলো আত্মাকে শান্তিপূর্ণভাবে শরীর ত্যাগ করতে সাহায্য করে।

৩. ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট

প্রাচীন মিশরীয়রা মমি তৈরির সময় নাক ও কান বন্ধ করত বিশেষ মোম দিয়ে, যাতে দেহের ভেতরে বাতাস ঢুকতে না পারে। এশিয়ায় এই প্রথা তুলো বা কাপড় দিয়ে শুরু হয় মধ্যযুগে, যখন মহামারির সময় মৃতদেহ দ্রুত পচে যাওয়া রোধ করা জরুরি ছিল। বাংলাদেশে ব্রিটিশ শাসনামলে হাসপাতাল ও মর্গে এই নিয়ম চালু হয়।

আধুনিক সময়ে তুলোর ব্যবহার

আজও হাসপাতাল ও মর্গে মৃতদেহ সংরক্ষণের সময় তুলো ব্যবহার করা হয়। তবে এখন কখনো কখনো সিলিকন বা বিশেষ জেলও ব্যবহৃত হয়। ঢাকার একটি প্রাইভেট মর্গের কর্মী রফিকুল ইসলাম বলেন, তুলো ছাড়া মৃতদেহের তরল মেঝে নষ্ট করে, যা পরিষ্কার করা কঠিনএছাড়া এটি পরিবারের সদস্যদের জন্য মানসিক কষ্ট কমায়।”

কী ধরনের তুলো ব্যবহার হয়?

সাধারণত স্টেরিলাইজড কটন (জীবাণুমুক্ত তুলো) ব্যবহার করা হয়, যা ফার্মেসি বা হাসপাতালে পাওয়া যায়। এটি নরম হওয়ায় দেহের কোথাও চাপ বা ক্ষত তৈরি করে না। গ্রামাঞ্চলে কিছু ক্ষেত্রে সুতি কাপড়ের টুকরোও ব্যবহার করা হয়।

বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ

  • মৃতদেহ স্পর্শ করার আগে হ্যান্ড গ্লাভস পরতে হবে।
  • দেহতরল থেকে জীবাণু ছড়ানোর ঝুঁকি এড়াতে তুলো ব্যবহার বাধ্যতামূলক।
  • শিশুদের বুঝিয়ে বলুন: এটি ভয়ের কিছু নয়, বরং মৃত ব্যক্তির প্রতি শ্রদ্ধার অংশ।

মানবিক দৃষ্টিকোণ

সমাজবিজ্ঞানী ড. নুসরাত জাহান বলেন, “মৃত্যুপরবর্তী রীতি শোক প্রকাশের পাশাপাশি জীবিতদের মানসিক সুস্থতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তুলো দেওয়ার মতো ছোট্ট কাজটিও যেন সম্মান ও মমতার সঙ্গে করা হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে।”

উপসংহার

মৃতদেহের নাক-কানে তুলো দেওয়ার রীতির পেছনে বিজ্ঞান ও সংস্কৃতির মেলবন্ধন চোখে পড়ার মতো। এটি শুধু শারীরিক প্রক্রিয়া নয়, বরং মানবিকতার প্রতীক। পরেরবার এই দৃশ্য দেখলে ভয় পাবেন না, বরং মনে করুন— এটি জীবনের শেষ মুহূর্তে সৌন্দর্য ও শ্রদ্ধা বজায় রাখার একটি চিরাচরিত প্রচেষ্টা।

আপলোডকারীর তথ্য

মিজানুর রহমান হৃদয়

মিজানুর রহমান হৃদয় বাংলাদেশের একজন তরুন লেখক, তিনি এখন পর্যন্ত ৪ টি বই প্রকাশ করেছেন । ২০১৭ থেকে ২০২৫ চলতি বছর সে বেশ কিছু পত্র - পত্রিকায় কাজ করে আসছেন । আর আমাদের সকালের বার্তা'র বিশেষ প্রতিনিধি হিসেবেও কাজ করছেন ।
জনপ্রিয় বার্তা

“মডেল মেঘনা আলম কেন পুলিশ হেফাজতে? জানালেন পুলিশ কর্মকর্তা”

মৃত মানুষের নাক-কানে কেন দেওয়া হয় তুলো? রহস্যের পেছনে রয়েছে বৈজ্ঞানিক ও সাংস্কৃতিক কারণ!

আপডেট সময় ০৬:০৪:১৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৮ এপ্রিল ২০২৫

মৃত্যুর পর মৃতদেহ সাজানোর সময় নাক ও কানে তুলো দেওয়ার রীতি বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন সংস্কৃতিতে প্রচলিত। অনেকেই মনে করেন, এটি শুধুই একটি প্রথা বা আধ্যাত্মিক বিশ্বাস। কিন্তু এই কাজের পেছনে লুকিয়ে আছে বৈজ্ঞানিক যুক্তি এবং নানান সাংস্কৃতিক ব্যাখ্যা! সম্প্রতি মেডিকেল সাইন্স ও নৃবিজ্ঞান গবেষণার আলোকে জানা গেছে, এই প্রথা শুধু কুসংস্কার নয়, বরং স্বাস্থ্যবিধি ও সম্মান প্রদর্শনের প্রতীক। চলুন জেনে নিই এর পেছনের অজানা কারণগুলো।

১. বৈজ্ঞানিক কারণ: দেহতরল নিয়ন্ত্রণ

মৃত্যুর পর মানবদেহের কোষগুলি ধীরে ধীরে ভেঙে যায়। এ সময় নাক, মুখ বা কান দিয়ে রক্ত, লালা বা অন্যান্য তরল বের হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তুলো ব্যবহারের মূল উদ্দেশ্য হলো দেহতরল যেন বাইরে না ছড়ায় তা নিয়ন্ত্রণ করা। এটি শুধু পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখে না, বরং দেহ সংরক্ষণে সাহায্য করে। ফরেনসিক এক্সপার্ট ডা. সায়েদুর রহমান বলেন, মৃতদেহ দ্রুত পচন শুরু হলে ব্যাকটেরিয়া জন্মায়তুলো ব্যবহারে এই প্রক্রিয়া কিছুটা ধীর হয় এবং দেহ সৎকারের প্রস্তুতিতে সময় পাওয়া যায়।”

২. সাংস্কৃতিক বিশ্বাস: আত্মার শান্তি

  • হিন্দু ধর্ম:বিশ্বাস করা হয়, তুলো আত্মাকে বাইরের নোংরা শক্তি থেকে রক্ষা করে। কানে তুলো দেওয়া হয় যেন আত্মা অশুভ কথা শুনতে না পায়।
  • ইসলাম:ইসলামিক রীতি অনুযায়ী, মৃত্যুর পর দেহ পরিষ্কার করা (গোসল) ফরজ। এই সময় কান-নাকের ভেতরের অংশে পানি প্রবেশ রোধ করতে তুলো ব্যবহার করা হয়।
  • বৌদ্ধ ধর্ম:কিছু সম্প্রদায়ের মতে, তুলো আত্মাকে শান্তিপূর্ণভাবে শরীর ত্যাগ করতে সাহায্য করে।

৩. ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট

প্রাচীন মিশরীয়রা মমি তৈরির সময় নাক ও কান বন্ধ করত বিশেষ মোম দিয়ে, যাতে দেহের ভেতরে বাতাস ঢুকতে না পারে। এশিয়ায় এই প্রথা তুলো বা কাপড় দিয়ে শুরু হয় মধ্যযুগে, যখন মহামারির সময় মৃতদেহ দ্রুত পচে যাওয়া রোধ করা জরুরি ছিল। বাংলাদেশে ব্রিটিশ শাসনামলে হাসপাতাল ও মর্গে এই নিয়ম চালু হয়।

আধুনিক সময়ে তুলোর ব্যবহার

আজও হাসপাতাল ও মর্গে মৃতদেহ সংরক্ষণের সময় তুলো ব্যবহার করা হয়। তবে এখন কখনো কখনো সিলিকন বা বিশেষ জেলও ব্যবহৃত হয়। ঢাকার একটি প্রাইভেট মর্গের কর্মী রফিকুল ইসলাম বলেন, তুলো ছাড়া মৃতদেহের তরল মেঝে নষ্ট করে, যা পরিষ্কার করা কঠিনএছাড়া এটি পরিবারের সদস্যদের জন্য মানসিক কষ্ট কমায়।”

কী ধরনের তুলো ব্যবহার হয়?

সাধারণত স্টেরিলাইজড কটন (জীবাণুমুক্ত তুলো) ব্যবহার করা হয়, যা ফার্মেসি বা হাসপাতালে পাওয়া যায়। এটি নরম হওয়ায় দেহের কোথাও চাপ বা ক্ষত তৈরি করে না। গ্রামাঞ্চলে কিছু ক্ষেত্রে সুতি কাপড়ের টুকরোও ব্যবহার করা হয়।

বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ

  • মৃতদেহ স্পর্শ করার আগে হ্যান্ড গ্লাভস পরতে হবে।
  • দেহতরল থেকে জীবাণু ছড়ানোর ঝুঁকি এড়াতে তুলো ব্যবহার বাধ্যতামূলক।
  • শিশুদের বুঝিয়ে বলুন: এটি ভয়ের কিছু নয়, বরং মৃত ব্যক্তির প্রতি শ্রদ্ধার অংশ।

মানবিক দৃষ্টিকোণ

সমাজবিজ্ঞানী ড. নুসরাত জাহান বলেন, “মৃত্যুপরবর্তী রীতি শোক প্রকাশের পাশাপাশি জীবিতদের মানসিক সুস্থতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তুলো দেওয়ার মতো ছোট্ট কাজটিও যেন সম্মান ও মমতার সঙ্গে করা হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে।”

উপসংহার

মৃতদেহের নাক-কানে তুলো দেওয়ার রীতির পেছনে বিজ্ঞান ও সংস্কৃতির মেলবন্ধন চোখে পড়ার মতো। এটি শুধু শারীরিক প্রক্রিয়া নয়, বরং মানবিকতার প্রতীক। পরেরবার এই দৃশ্য দেখলে ভয় পাবেন না, বরং মনে করুন— এটি জীবনের শেষ মুহূর্তে সৌন্দর্য ও শ্রদ্ধা বজায় রাখার একটি চিরাচরিত প্রচেষ্টা।