ঢাকা, বাংলাদেশ: নিমগাছের পাতার তেতো স্বাদ প্রায় সবারই জানা। কিন্তু এই তেতো স্বাদের পেছনে কী কারণ আছে? এটি কি নিমের গুণ নাকি অভিশাপ? উদ্ভিদ বিজ্ঞান ও আয়ুর্বেদিক চিকিৎসার তথ্য ঘেঁটে জানা গেছে, নিমপাতার তিক্ততার পেছনে রয়েছে বিশেষ রাসায়নিক যৌগ, যা প্রকৃতির দেওয়া এক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা।
বিজ্ঞান বলে: রাসায়নিক যৌগের জাদু
নিমপাতায় থাকে “অ্যাজাডিরাক্টিন”, “নিম্বিন” ও “স্যালানিন” নামের যৌগ। এগুলো লিমোনয়েড ও ট্রাইটারপিনয়েড গোত্রের রাসায়নিক পদার্থ, যা পোকামাকড় ও প্রাণীদের থেকে গাছকে বাঁচায়। এই যৌগগুলোই নিমপাতাকে তেতো করে তোলে।
প্রতিরক্ষার হাতিয়ার
- পোকা তাড়ানো:অ্যাজাডিরাক্টিন পোকাদের জন্য বিষাক্ত। নিমের তিক্ততা পোকাদের পাতায় ডিম পাড়া বা খাওয়া থেকে বিরত রাখে।
- প্রাণীদের হাত থেকে সুরক্ষা:গরু-ছাগলের মতো প্রাণীরা তেতো নিমপাতা এড়িয়ে চলে।
মানুষের জন্য গুণের ভাণ্ডার
আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় নিমের তিক্ততাকে ঔষধি গুণের লক্ষণ বলে মানা হয়:
- অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল:নিমপাতা ব্যাকটেরিয়া ও ফাঙ্গাস দূর করে।
- রোগ প্রতিরোধ:নিমের রস রক্ত শুদ্ধ করে ও ত্বকের সমস্যা (একজিমা, ব্রণ) কমায়।
- ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ:গবেষণায় দেখা গেছে, নিমপাতা রক্তের সুগার কমাতে সাহায্য করে।
গ্রামীণ সংস্কৃতিতে নিম
বাংলাদেশ ও ভারতে নিমকে “গাঁয়ের ফার্মেসি” বলা হয়। বাড়ির আঙিনায় নিমগাছ থাকলে নাকি রোগ-জ্বালা দূরে থাকে! নিমপাতা দিয়ে তৈরি হয় মুখ পরিষ্কারনের দাঁতন, চুলের তেল ও কীটনাশক।
কৌতূহলী তথ্য
- নিমের ফুল মিষ্টি গন্ধযুক্ত, কিন্তু ফল তেতো।
- নিমপাতা সেদ্ধ পানি গোসল করলে চুলকানি দূর হয়।
- বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) নিমকে “২১শ শতকের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ গাছ” হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।
পরিশেষে:
নিমপাতার তিক্ততা প্রকৃতির এক চালাকি। এটি গাছকে বাঁচায় আর মানুষকে দেয় নিরাময়ের উপায়। তাই তেতো স্বাদকে অভিশাপ না ভেবে, নিমের গুণের কথা মনে রাখাই ভালো!