ঢাকা, বাংলাদেশ: কিছু পুরুষের বুকের অংশ মেয়েদের মতো বড় হয়ে ওঠে, যা অনেকের কাছেই অজানা একটি স্বাস্থ্য বিষয়। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় একে “জাইনেকোমাস্টিয়া” (Gynecomastia) বলা হয়। এটির পেছনে প্রধানত হরমোনের ভারসাম্যহীনতা, স্থূলতা বা ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দায়ী। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সঠিক সময়ে চিকিৎসা নিলে এই সমস্যা সমাধান সম্ভব।
জাইনেকোমাস্টিয়া কী?
এটি একটি শারীরিক অবস্থা, যেখানে পুরুষের স্তনগ্রন্থি (Breast Tissue) অস্বাভাবিকভাবে বড় হয়ে যায়। সাধারণত শরীরে ইস্ট্রোজেন (মহিলা হরমোন) ও টেস্টোস্টেরন (পুরুষ হরমোন) এর ভারসাম্য নষ্ট হলে এই সমস্যা দেখা দেয়।
প্রধান কারণগুলো:
১. হরমোনের পরিবর্তন:
- কিশোর বয়সে বা বয়সকালে হরমোনের ওঠানামা।
- লিভার বা থাইরয়েডের রোগে হরমোন উৎপাদন ব্যাহত হলে।
২. স্থূলতা:
- অতিরিক্ত মেদ শরীরে ইস্ট্রোজেন হরমোন বাড়িয়ে দেয়।
৩. ওষুধের প্রভাব:
- উচ্চ রক্তচাপ, মানসিক রোগ বা ক্যানসারের কিছু ওষুধ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে স্তনগ্রন্থি বাড়ায়।
৪. জেনেটিক কারণ:
- পরিবারে কারও এই সমস্যা থাকলে ঝুঁকি বাড়ে।
কখন চিকিৎসকের কাছে যাবেন?
- বুক ব্যথা বা চাকা অনুভব করলে।
- হঠাৎ করে স্তনের আকার দ্রুত বাড়তে থাকলে।
- শরীরে অন্যান্য লক্ষণ (যেমন: ক্লান্তি, ওজন কমা) দেখা দিলে।
চিকিৎসা পদ্ধতি:
- লাইফস্টাইল পরিবর্তন:ওজন কমানো, ব্যায়াম ও সুষম খাদ্যাভ্যাস।
- ওষুধ:হরমোনের ভারসাম্য ফিরিয়ে আনার জন্য চিকিৎসকের পরামর্শে।
- সার্জারি:লিপোসাকশন বা স্তনগ্রন্থি অপসারণ (বিশেষ ক্ষেত্রে)।
বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ:
ঢাকার এন্ডোক্রাইনোলজিস্ট ডা. সাবরিনা হক বলেন, “কিশোর বয়সে সাময়িকভাবে এই সমস্যা দেখা দিলেও ভয় পাওয়ার কিছু নেই। তবে স্থায়ী হলে রক্ত পরীক্ষা ও আলট্রাসনোগ্রাফি করে কারণ খুঁজে বের করতে হবে।”
সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি:
অনেকে এই সমস্যাকে লজ্জার মনে করেন। তবে চিকিৎসকরা বলছেন, এটি কোনো লজ্জার বিষয় নয়—এটি একটি শারীরিক অবস্থা মাত্র। সচেতনতা বাড়লে চিকিৎসা নেওয়াও সহজ হবে।
সতর্কতা:
বাজারে বিভিন্ন “মিরাকেল ক্রিম” বা ব্যায়ামের দাবি এড়িয়ে চলুন। ভুল চিকিৎসায় সমস্যা জটিল হতে পারে।
পরিশেষে:
জাইনেকোমাস্টিয়া বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নিরীহ, কিন্তু মানসিক চাপের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। সময়মতো চিকিৎসা ও পরামর্শ নিলে সুস্থ জীবনযাপন সম্ভব।