ঢাকা, বাংলাদেশ: মচমচে জিলাপির স্বাদ নিতে গিয়ে কখনও ভেবেছেন কি, এর গায়ে সুন্দর প্যাঁচ বা কুণ্ডলী থাকে কেন? এই প্রশ্নের উত্তর অনেকেরই অজানা। রাস্তার কোণে বা মিষ্টির দোকানে জিলাপি যতই মুখরোচক হোক, এর আকৃতির পেছনের বিজ্ঞান ও ইতিহাস জানলে চমকে যাবেন!
জিলাপির উৎপত্তি ও যাত্রা
জিলাপির জন্ম মধ্যপ্রাচ্যে। পারস্য ভাষায় একে বলা হতো “জালাবিয়া” বা “জুলাবিয়ান”। মুঘলরা এটি ভারতীয় উপমহাদেশে নিয়ে আসে। বাংলায় নাম হয় “জিলাপি”। তবে আকৃতিটা প্যাঁচানো কেন? এর পেছনে রয়েছে বানানোর পদ্ধতি ও রসায়নের গল্প।
প্যাঁচের বিজ্ঞান: ক্রিস্পিনেস ও সিরাপ শোষণ
জিলাপির ব্যাটার (মিশ্রণ) তৈরি হয় ময়দা, দই ও বেকিং পাউডার দিয়ে। এই ব্যাটার নলাকার পাত্রে ভরে তেলে সেঁটে দেওয়া হয়। প্যাঁচ দেওয়ার কারণ হলো:
১. সর্বোচ্চ ক্রাঞ্চিনেস: কুণ্ডলী আকৃতি বাড়তি পৃষ্ঠতল তৈরি করে, যা তেলে ভাজার সময় বেশি ক্রিস্পি করে।
২. সিরাপ শোষণ: প্যাঁচের ফাঁকে ফাঁকে সিরাপ জমে, যা জিলাপিকে মিষ্টি ও নরম রাখে।
৩. সৌন্দর্য: কুণ্ডলী আকৃতি চোখে প্রিয় বলে বিক্রি বাড়ে!
কীভাবে বানানো হয়?
জিলাপি তৈরির সময় বিশেষ নল (কনিক্যাল ফানেল) ব্যবহার করা হয়। দক্ষ হাতের নিপুণ ঘুর্ণনে তেলে ছানার ছাঁচে প্যাঁচ দেওয়া হয়। গরম তেলে পড়ার পর ব্যাটার দ্রুত ফুলে কুণ্ডলী আকার নেয়।
বিভিন্ন দেশে জিলাপির নাম ও আকৃতি
- ভারত:জালেবি (সোজা বা গোল আকৃতি)।
- ইরান:জুলাবিয়া (ফুলের মতো ডিজাইন)।
- বাংলাদেশ:জিলাপি (কুণ্ডলী প্যাঁচ)।
সংস্কৃতিতে জিলাপির স্থান
জিলাপি শীতের পিঠা উৎসব থেকে ঈদ বা জন্মদিন—সব অনুষ্ঠানে জনপ্রিয়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখাতেও জিলাপির উল্লেখ আছে। ঢাকার ঐতিহ্যবাহী দোকান “বরাতের জিলাপি”-র মালিক রফিকুল ইসলাম বলেন, “প্যাঁচ না থাকলে জিলাপির আসল স্বাদই থাকে না।”
কৌতূহলী তথ্য
- বিশ্ব রেকর্ড:২০২২ সালে ভারতের একটি দল ২৫০ কেজি ওজনের জিলাপি বানিয়ে বিশ্বরেকর্ড গড়ে।
- নোনতা জিলাপি:বাংলাদেশের কিছু অঞ্চলে নোনতা জিলাপি খাওয়ার চল আছে!
পরিশেষে:
জিলাপির প্যাঁচ শুধু শিল্প নয়, বিজ্ঞানেরও অবদান। এই আকৃতি না থাকলে হয়তো আমরা কখনও জানতেই পারতাম না, মচমচে ভাজা আর মিষ্টি সিরাপের এমন জোড়া এত সুন্দর হতে পারে!