ঢাকা, বাংলাদেশ: গরমে ঠোঁটে জমে থাকা আইসক্রিমের স্বাদ নেওয়ার সময় কখনও ভেবেছেন কি, এই শব্দের বাংলা অর্থ কী? “আইসক্রিম” নামটি এতই জনপ্রিয় যে এর বাংলা প্রতিশব্দ খুঁজতে গিয়েও হোঁচট খান অনেকেই। আসুন জেনে নেওয়া যান এই শব্দের ভাষাগত ইতিহাস ও বাংলায় এর সম্ভাব্য রূপ।
আইসক্রিম শব্দের উৎপত্তি
“আইসক্রিম” ইংরেজি শব্দ, যা এসেছে “iced cream” (বরফযুক্ত ক্রিম) থেকে। ১৮শ শতকে ইউরোপে এই মিষ্টান্ন জনপ্রিয় হওয়ার পর ব্রিটিশদের মাধ্যমে বাংলায় শব্দটি ঢুকে পড়ে।
বাংলা একাডেমি কী বলে?
বাংলা একাডেমির “আধুনিক বাংলা অভিধান”-এ “আইসক্রিম”-কে সরাসরি বিদেশি শব্দ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। তবে কিছু বাংলা পরিভাষায় একে “হিমমিষ্টান্ন” (হিম + মিষ্টান্ন) বা “শীতল ক্ষীর” বলার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু এগুলো জনপ্রিয় হয়নি।
কেন বাংলা শব্দ চালু হয়নি?
ভাষাবিদ ড. রিয়াজুল হক বলেন, “আইসক্রিম একটি সাংস্কৃতিক আমদানি। এটি বাংলায় আসার আগে এখানে এর সমতুল্য কোনো খাবার ছিল না। তাই স্থানীয় নাম তৈরি হয়নি। ‘কুলফি’ বা ‘ফালুদা’র মতো ঐতিহ্যবাহী আইসক্রিমের রূপান্তরিত সংস্করণ থাকলেও আধুনিক আইসক্রিমের জন্য বিদেশি শব্দই রয়ে গেছে।”
প্রাচীন বাংলায় ঠাণ্ডা মিষ্টির নমুনা
- কুলফি:ঘন দুধ ও চিনি জমিয়ে বরফে তৈরি করা হতো। মুঘল আমল থেকে বাংলায় এই পদ প্রচলিত।
- ফালুদা:গোলাপজল, সেমাই ও বরফের মিশ্রণ। এখনও গ্রামেগঞ্জে জনপ্রিয়।
বাংলাদেশে আইসক্রিমের যাত্রা
১৯৬০-এর দশকে ঢাকার “পোলো আইসক্রিম” ও “কোয়ালিটি” ব্র্যান্ডের মাধ্যমে আইসক্রিম বাণিজ্যিকভাবে জনপ্রিয় হয়। তখন থেকেই “আইসক্রিম” শব্দটি স্থায়ী হয়ে যায়।
কৌতূহলী তথ্য
- “ক্রিম” নয়, “ক্রীম”:বাংলায় “ক্রিম” লেখা হলেও উচ্চারণে “ক্রীম” বলা হয়।
- রবীন্দ্রনাথের আইসক্রিম:রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ইংল্যান্ডে পড়ার সময় আইসক্রিমের স্বাদ পেয়ে চিঠিতে লিখেছিলেন, “এমন ঠাণ্ডা মিষ্টি বাংলায় আনো!”
পরিশেষে:
ভাষা জীবন্ত প্রাণীর মতো—এটি সময় ও সংস্কৃতির সাথে বদলায়। “আইসক্রিম” বাংলায় আজও বিদেশি শব্দ হলেও এটি আমাদের সংস্কৃতির অংশ হয়ে গেছে। তাই বাংলা একাডেমির পরিভাষা না মানলেও, এই শব্দের মজাদার ইতিহাস জানা থাকলে মনের ভাঁজে ঠাণ্ডা হওয়ার পালা!