টি-শার্ট—নিত্যদিনের এই পোশাকটি সবাই পরেন, কিন্তু এর নামে থাকা “টি” এর অর্থ কী? রাজধানীর ফ্যাশন স্টুডিও ও শপিং মলগুলোতে পরিচালিত জরিপে দেখা গেছে, ৯০% ক্রেতা এই প্রশ্নের সঠিক উত্তর জানেন না। অনেকে ভাবেন, “টি” হলো ট্রেন্ড বা টিনএজারের সংক্ষিপ্ত রূপ! আসল ইতিহাস জানলে চমকে যাবেন। চলুন জেনে নিই টি-শার্টের নামকরণের রহস্য, এর বিবর্তন এবং বিশ্বজুড়ে এর প্রভাব।
টি-শার্টের “টি” কোথা থেকে এলো?
টি-শার্টের নামটি এসেছে এর আকৃতি থেকে। যখন টি-শার্টকে সমতল করে রাখা হয়, তখন এর বডি ও হাতা মিলে ইংরেজি “T” অক্ষরের মতো দেখায়। এই সরল ব্যাখ্যাই নামের পেছনের মূল কারণ! প্রথম দিকে একে “টি-আকৃতির শার্ট” বলা হতো, যা পরে সংক্ষিপ্ত হয়ে “টি-শার্ট” হয়।
ইতিহাস: যেভাবে টি-শার্ট বিশ্বজয় করল
- ১৯০০-এর দশক:টি-শার্ট যুক্তরাষ্ট্রে নৌবাহিনীর অন্তর্বাস হিসেবে ব্যবহার হতো। সৈন্যরা এটিকে সাদা সুতি কাপড়ে পরতেন।
- ১৯৫০-এর দশক:হলিউডের ছবিতে মার্লোন ব্র্যান্ডো ও জেমস ডিন টি-শার্ট পরা শুরু করলে এটি যুবসংস্কৃতির প্রতীক হয়ে ওঠে।
- ১৯৭০-এর দশক:ব্যান্ড লোগো, রাজনৈতিক স্লোগান বা ব্র্যান্ডিংয়ের মাধ্যম হিসেবে টি-শার্ট জনপ্রিয় হয়।
টি-শার্টের বাংলা নাম কী?
বাংলা একাডেমির মতে, টি-শার্টের সরাসরি বাংলা পরিভাষা নেই। তবে একে “টি-আকৃতির জামা” বলা যেতে পারে। বাংলাদেশে এটি “টি-শার্ট” বা সংক্ষেপে “টি” নামেই পরিচিত।
বাংলাদেশে টি-শার্টের যাত্রা
বাংলাদেশে টি-শার্টের জনপ্রিয়তা শুরু হয় ১৯৯০-এর দশকে ক্রিকেট বিশ্বকাপের সময়। শহীদুল আলম স্বপন, হামিমসহ স্থানীয় ব্র্যান্ডগুলো প্রথমে সাদা টি-শার্ট বাজারজাত করে। এখন রাজধানীর নিউমার্কেট, বসুন্ধরায় স্থানীয় ডিজাইনের টি-শার্টের চাহিদা তুঙ্গে!
টি-শার্ট বানানোর প্রযুক্তি
- প্রাচীন পদ্ধতি:হাতে কেটে সেলাই করা হতো।
- আধুনিক পদ্ধতি:এখন লেজার কাটিং ও ডিজিটাল প্রিন্টিং টেকনোলজি ব্যবহার হয়। ঢাকার তেজগাঁও ও আশুলিয়ায় ১০০টির বেশি ফ্যাক্টরিতে প্রতিদিন লক্ষাধিক টি-শার্ট তৈরি হয়।
বিশেষজ্ঞদের মতামত
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্যাশন ডিজাইন বিভাগের অধ্যাপক ড. সায়মা রহমান বলেন, “টি-শার্ট কাপড়ের টুকরো নয়, এটি স্বাধীনতা ও স্বকীয়তার প্রকাশ। এর ডিজাইন যেমন বদলেছে, তেমনি বদলেছে সামাজিক রীতি।”
মজার তথ্য
- বিশ্বের সবচেয়ে দামি টি-শার্টটির দাম১.৬ কোটি টাকা! এটি ডায়মন্ড দিয়ে সাজানো।
- বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় সাদা টি-শার্ট।
- টি-শার্ট রিসাইক্লিং করে তৈরি করা হয় মপ বা কার্পেট!
শিশুদের জন্য সহজ ব্যাখ্যা
প্রশ্ন: টি-শার্টের নাম “টি” কেন?
উত্তর: টি-শার্টকে সোজা করে রাখলে তা দেখতে ইংরেজি “T” অক্ষরের মতো লাগে। তাই এই নাম!
উপসংহার
টি-শার্টের “টি” শুধু একটি অক্ষর নয়, এটি ফ্যাশন ইতিহাসের পাতায় এক বিপ্লবের নাম। পরেরবার টি-শার্ট পরার সময় মনে করুন—এই সহজ পোশাকটিই বহন করে চলেছে শতাব্দীর গল্প!