ঢাকা , শনিবার, ১০ মে ২০২৫, ২৭ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনামঃ
“মডেল মেঘনা আলম কেন পুলিশ হেফাজতে? জানালেন পুলিশ কর্মকর্তা” “মুঠোফোন চেয়ে নারীর হাতে অজ্ঞান যুবক, লুট ১ লাখ টাকা” কানটুপি পরে নামাজ আদায় করা যাবে কি? ইসলাম কী বলে? ইসলামে ঐক্যের গুরুত্ব: কোরআন-হাদিসের আলোকে সমাজ গঠনের মূলমন্ত্র দাফনের পর সম্মিলিত দোয়া: ইসলামের নির্দেশনা কী? ফরজ গোসল ছাড়াই সেহরি খাওয়া যাবে? জেনে নিন ইসলামি বিধান ইস্তেখারার দোয়া দেখে পড়া যাবে কি? জেনে নিন ইসলামের নির্দেশনা কেটে ফেলা চুল-নখ কোথায় ফেলবেন? ধর্ম, সংস্কৃতি ও পরিবেশবান্ধব সমাধান সূর্যাস্তের সময় তাওয়াফের নামাজ আদায় করা যাবে? ইসলামিক স্কলারদের ব্যাখ্যা মৃত বাবা-মাকে স্বপ্নে দেখলে যা করবেন: মনোবিদ ও ধর্মীয় বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ
নোটিশঃ
সকাল হোক সত্য খবর দিয়ে । দেশ - বিদেশের সর্বশেষ খবর সবার আগে পেতে সকালের বার্তা এর সাথেই থাকুন ।

ইতালির কথা বলে লিবিয়ায় নিয়ে তরুণকে বিক্রি ।

শরীয়তপুরে এক তরুণকে ইতালি পাঠানোর কথা বলে লিবিয়া নিয়ে মাফিয়াদের কাছে বিক্রির অভিযোগ উঠেছে দালাল চক্রের বিরুদ্ধে। ২৭ লাখ টাকা দিলেও তাঁর মুক্তি মেলেনি।

পুলিশ ও পরিবার সূত্রে জানা যায়, ভুক্তভোগী তরুণ শরীয়তপুরের জাজিরার বিকেনগর (বড় কৃষ্ণনগর) ইউনিয়নের ছোবান্দি মাদবর কান্দি এলাকার আইয়ুব আলী মোল্লার ছেলে রফিক মিয়া। তাঁকে লিবিয়া দিয়ে ইতালিতে পাঠানোর কথা বলে তাঁর পরিবারের কাছ থেকে ২০২৪ সালের আগস্টে ৫ লাখ টাকা নেন একই উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের বাচ্চু মাতুব্বর কান্দি এলাকার দালাল জসিম মাতুব্বর। তিনি রফিককে প্রথমে লিবিয়া নিয়ে যান। সেখানে তাঁকে হস্তান্তর করা হয় ‘মানব পাচারকারী চক্রের’ বাংলাদেশি দুই সদস্য শফিক ও সালামের কাছে। তাঁরা লিবিয়া থেকে ইতালিতে পাঠানোর কথা বলে জসিমের মাধ্যমে রফিকের পরিবারের কাছ থেকে ২৭ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। পরে জসিম ও তাঁর সঙ্গীরা মিলে রফিককে মাফিয়াদের কাছে বিক্রি করে দেন।

মাফিয়ারা রফিককে জিম্মি করে লিবিয়ার একটি স্থানে আটকে নির্যাতন করছে। এখন তারা আরও ৬ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করছে। ওই টাকার জন্য রফিকের পরিবার ও তাঁর আত্মীয়স্বজনকে মোবাইল ফোনে ভিডিও কল করে জিম্মিদশা ও নির্যাতনের দৃশ্য দেখাচ্ছে তারা। এ ঘটনায় রফিকের বাবা জাজিরা থানাসহ র‍্যাব, সেনাবাহিনী, আইন উপদেষ্টা ও প্রধান উপদেষ্টা বরাবর অভিযোগ করেছেন। পাশাপাশি ভুক্তভোগী পরিবার সংবাদ সম্মেলনও করেছে।

রফিকের বাবা আইয়ুব আলী মোল্লা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘দালাল জসিম মাতুব্বরের খেলনার দোকান ছিল। আমি তাঁর কাছ থেকে খেলনা কিনে বিক্রি করতাম। একদিন জসিম বললেন, তিনি লিবিয়ায় লোক পাঠান। আমাকে বিভিন্নভাবে বুঝিয়ে ছেলেকে লিবিয়া পাঠানোর জন্য বললেন। আমিও রাজি হয়ে জসিমকে ৫ লাখ টাকা দিয়ে ছেলেকে লিবিয়া পাঠিয়েছি। পরে তিনি লিবিয়া থেকে রফিককে ইতালি পাঠাতে আরও ৮ লাখ টাকা নেন। কিন্তু দালালরা লিবিয়ার মাফিয়ার কাছে বিক্রি করে দেয় ছেলেকে।’

আইয়ুব আলী বলেন, মাফিয়ারা তাঁর ছেলেকে জিম্মি করে রেখে নির্যাতন করে, সেই দৃশ্য মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ভিডিও করে তাদের কাছে পাঠায়। এ করুণ দৃশ্য সহ্য করার মতো না। মাফিয়াদের কাছ থেকে ছেলেকে ছাড়াতে দালাল জসিম মাতুব্বরের মাধ্যমে আরও ১৪ লাখ টাকা দিয়েছেন। এই টাকা দিতে ফসলি জমি, বসতভিটা সব বিক্রি করেছেন। ব্যাংক ও এনজিও থেকে ঋণ করেছেন। এখন মাফিয়ারা তাদের কাছে আরও ৬ লাখ টাকা চায়।

‘সব শেষ এখন ৬ লাখ টাকা পাব কোথায়? আমি আমার ছেলেকে ফিরে পেতে চাই। তা না হলে আমি বাঁচব না।’ এ কথা বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন আইয়ুব।

স্থানীয় ইউপি সদস্য জসিম মৃধাসহ এলাকাবাসী জানান, ভুল পথে দালালদের মাধ্যমে বিদেশ গিয়ে অসহায় পরিবারটি জমি, বসতভিটা সব বিক্রি করেছে। এ ছাড়া ব্যাংক ও এনজিওর কাছ থেকে ঋণ এনে পরিশোধ করতে পারছে না। তাই দলালদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। রফিককে ফিরিয়ে আনাসহ তাঁর পরিবারকে যেন সব টাকা ফেরত দেওয়া হয়– এমন দাবি জানান তারা।

এ ব্যাপারে অভিযুক্ত জসিম মাতুব্বর বলেন, তিনি রফিক মিয়াকে বিদেশ নেননি। তবে তাঁর কাছে রফিকের বাবা আইয়ুব আলী মোল্লা টাকা জমা রেখেছিলেন। কারণ তিনি তাঁর (জসিম) হকার ছিলেন। তারা এখন তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করছেন। তিনি দালাল নন এবং কোনো মাফিয়ার সঙ্গেও জড়িত নন।

জাজিরা থানার ওসি আল-আমিন বলেন, এ বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আপলোডকারীর তথ্য

মিজানুর রহমান হৃদয়

মিজানুর রহমান হৃদয় বাংলাদেশের একজন তরুন লেখক, তিনি এখন পর্যন্ত ৪ টি বই প্রকাশ করেছেন । ২০১৭ থেকে ২০২৫ চলতি বছর সে বেশ কিছু পত্র - পত্রিকায় কাজ করে আসছেন । আর আমাদের সকালের বার্তা'র বিশেষ প্রতিনিধি হিসেবেও কাজ করছেন ।
জনপ্রিয় বার্তা

“মডেল মেঘনা আলম কেন পুলিশ হেফাজতে? জানালেন পুলিশ কর্মকর্তা”

ইতালির কথা বলে লিবিয়ায় নিয়ে তরুণকে বিক্রি ।

আপডেট সময় ১২:২২:১৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ১ ডিসেম্বর ২০২৪

শরীয়তপুরে এক তরুণকে ইতালি পাঠানোর কথা বলে লিবিয়া নিয়ে মাফিয়াদের কাছে বিক্রির অভিযোগ উঠেছে দালাল চক্রের বিরুদ্ধে। ২৭ লাখ টাকা দিলেও তাঁর মুক্তি মেলেনি।

পুলিশ ও পরিবার সূত্রে জানা যায়, ভুক্তভোগী তরুণ শরীয়তপুরের জাজিরার বিকেনগর (বড় কৃষ্ণনগর) ইউনিয়নের ছোবান্দি মাদবর কান্দি এলাকার আইয়ুব আলী মোল্লার ছেলে রফিক মিয়া। তাঁকে লিবিয়া দিয়ে ইতালিতে পাঠানোর কথা বলে তাঁর পরিবারের কাছ থেকে ২০২৪ সালের আগস্টে ৫ লাখ টাকা নেন একই উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের বাচ্চু মাতুব্বর কান্দি এলাকার দালাল জসিম মাতুব্বর। তিনি রফিককে প্রথমে লিবিয়া নিয়ে যান। সেখানে তাঁকে হস্তান্তর করা হয় ‘মানব পাচারকারী চক্রের’ বাংলাদেশি দুই সদস্য শফিক ও সালামের কাছে। তাঁরা লিবিয়া থেকে ইতালিতে পাঠানোর কথা বলে জসিমের মাধ্যমে রফিকের পরিবারের কাছ থেকে ২৭ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। পরে জসিম ও তাঁর সঙ্গীরা মিলে রফিককে মাফিয়াদের কাছে বিক্রি করে দেন।

মাফিয়ারা রফিককে জিম্মি করে লিবিয়ার একটি স্থানে আটকে নির্যাতন করছে। এখন তারা আরও ৬ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করছে। ওই টাকার জন্য রফিকের পরিবার ও তাঁর আত্মীয়স্বজনকে মোবাইল ফোনে ভিডিও কল করে জিম্মিদশা ও নির্যাতনের দৃশ্য দেখাচ্ছে তারা। এ ঘটনায় রফিকের বাবা জাজিরা থানাসহ র‍্যাব, সেনাবাহিনী, আইন উপদেষ্টা ও প্রধান উপদেষ্টা বরাবর অভিযোগ করেছেন। পাশাপাশি ভুক্তভোগী পরিবার সংবাদ সম্মেলনও করেছে।

রফিকের বাবা আইয়ুব আলী মোল্লা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘দালাল জসিম মাতুব্বরের খেলনার দোকান ছিল। আমি তাঁর কাছ থেকে খেলনা কিনে বিক্রি করতাম। একদিন জসিম বললেন, তিনি লিবিয়ায় লোক পাঠান। আমাকে বিভিন্নভাবে বুঝিয়ে ছেলেকে লিবিয়া পাঠানোর জন্য বললেন। আমিও রাজি হয়ে জসিমকে ৫ লাখ টাকা দিয়ে ছেলেকে লিবিয়া পাঠিয়েছি। পরে তিনি লিবিয়া থেকে রফিককে ইতালি পাঠাতে আরও ৮ লাখ টাকা নেন। কিন্তু দালালরা লিবিয়ার মাফিয়ার কাছে বিক্রি করে দেয় ছেলেকে।’

আইয়ুব আলী বলেন, মাফিয়ারা তাঁর ছেলেকে জিম্মি করে রেখে নির্যাতন করে, সেই দৃশ্য মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ভিডিও করে তাদের কাছে পাঠায়। এ করুণ দৃশ্য সহ্য করার মতো না। মাফিয়াদের কাছ থেকে ছেলেকে ছাড়াতে দালাল জসিম মাতুব্বরের মাধ্যমে আরও ১৪ লাখ টাকা দিয়েছেন। এই টাকা দিতে ফসলি জমি, বসতভিটা সব বিক্রি করেছেন। ব্যাংক ও এনজিও থেকে ঋণ করেছেন। এখন মাফিয়ারা তাদের কাছে আরও ৬ লাখ টাকা চায়।

‘সব শেষ এখন ৬ লাখ টাকা পাব কোথায়? আমি আমার ছেলেকে ফিরে পেতে চাই। তা না হলে আমি বাঁচব না।’ এ কথা বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন আইয়ুব।

স্থানীয় ইউপি সদস্য জসিম মৃধাসহ এলাকাবাসী জানান, ভুল পথে দালালদের মাধ্যমে বিদেশ গিয়ে অসহায় পরিবারটি জমি, বসতভিটা সব বিক্রি করেছে। এ ছাড়া ব্যাংক ও এনজিওর কাছ থেকে ঋণ এনে পরিশোধ করতে পারছে না। তাই দলালদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। রফিককে ফিরিয়ে আনাসহ তাঁর পরিবারকে যেন সব টাকা ফেরত দেওয়া হয়– এমন দাবি জানান তারা।

এ ব্যাপারে অভিযুক্ত জসিম মাতুব্বর বলেন, তিনি রফিক মিয়াকে বিদেশ নেননি। তবে তাঁর কাছে রফিকের বাবা আইয়ুব আলী মোল্লা টাকা জমা রেখেছিলেন। কারণ তিনি তাঁর (জসিম) হকার ছিলেন। তারা এখন তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করছেন। তিনি দালাল নন এবং কোনো মাফিয়ার সঙ্গেও জড়িত নন।

জাজিরা থানার ওসি আল-আমিন বলেন, এ বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।