চট্টগ্রাম, বাংলাদেশ: ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে মাসে ৩ লাখ টাকা আয় করছেন চট্টগ্রামের তামিম আহমেদ (২৭)। ওয়েব ডেভেলপমেন্ট ও গ্রাফিক ডিজাইনের কাজ করে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও ইউরোপের ক্লায়েন্টদের সাথে কাজ করছেন তিনি। গতকাল সোমবার (২৪ মার্চ ২০২৫) এক সাক্ষাৎকারে তামিম জানান, দক্ষতা, অধ্যবসায় আর সময়মতো ডেলিভারির মাধ্যমেই এই সাফল্য সম্ভব হয়েছে। তাঁর এই গল্প এখন অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেছে হাজারো তরুণের।
কী কাজ করেন তামিম?
তামিম মূলত দুই ধরনের সেবা দেন:
১. ওয়েব ডেভেলপমেন্ট: ই-কমার্স সাইট, এডুকেশন প্ল্যাটফর্ম ও কর্পোরেট ওয়েবসাইট বানানো।
২. গ্রাফিক ডিজাইন: লোগো, বিজ্ঞাপন, সোশ্যাল মিডিয়া কন্টেন্ট ও প্রোডাক্ট প্যাকেজিং ডিজাইন।
তিনি প্রতি মাসে গড়ে ১০-১২টি প্রজেক্ট সম্পন্ন করেন। তাঁর গড় আয় ৩ লাখ টাকা, যা শীর্ষ ১% ফ্রিল্যান্সারের কাতারে রাখে তাঁকে।
“অভাবই ছিল প্রেরণা”: তামিমের যাত্রা
২০১৯ সালে কম্পিউটার সায়েন্সে ডিগ্রি নেওয়ার পর চাকরির চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন তামিম। তখন ইউটিউব থেকে শিখতে শুরু করেন ওয়েব ডিজাইন। প্রথম প্রজেক্টে আয় করেছিলেন মাত্র ৫ হাজার টাকা। এখন তাঁর ক্লায়েন্টদের ৯০% বিদেশি। তামিম বলেন, “ফ্রিল্যান্সিং মানে শুধু আয় নয়, বিশ্বজুড়ে সম্পর্ক গড়া। আমার এখন ১৫টি দেশের ক্লায়েন্ট আছে।”
দিনের রুটিন:
তামিমের দিন শুরু হয় ভোর ৬টায়। কাজ করেন দুপুর ১২টা পর্যন্ত। বিকেলে নতুন স্কিল শেখা ও ক্লায়েন্ট মিটিং। সপ্তাহে ৫ দিন কাজ করে শুক্র-শনি ছুটি রাখেন। “পরিবার ও নিজের জন্য সময় দেওয়াটা জরুরি,” বললেন তিনি।
সাফল্যের চাবিকাঠি:
তামিমের মতে, ফ্রিল্যান্সিংয়ে টিকে থাকতে তিনটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ:
১. ক্লায়েন্ট কমিউনিকেশন: সময়মতো আপডেট দেওয়া ও সমস্যা সমাধান।
২. পোর্টফোলিও: নিজের সেরা কাজ অনলাইনে দেখানোর প্ল্যাটফর্ম (তামিমের বেভান্স পোর্টফোলিও: www.tamimdesigns.com )।
৩. অটোমেশন: অপ্রয়োজনীয় কাজের জন্য টুলস ব্যবহার (যেমন: Canva, Trello)।
আয়ের গোপন কথা:
তামিমের আয়ের ৭০% আসে ওয়েব ডেভেলপমেন্ট থেকে। বাকিটা গ্রাফিক ডিজাইন ও কনসাল্টেন্সি ফি। তিনি প্রতি ঘণ্টার কাজের জন্য ৫০-৭০ ডলার চার্জ করেন। মাসের শেষে ২০-৩০% টাকা সেভিংসে রাখেন।
সমাজের জন্য ভাবনা:
তামিম স্থানীয় যুবকদের বিনামূল্যে ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণ দেন। তাঁর প্রতিষ্ঠান “ডিজিটাল স্কিল ল্যাব” থেকে গত দুই বছরে ৩০০ জন প্রশিক্ষণ পেয়েছে। প্রশিক্ষণার্থী সুমাইয়া আক্তার বলেন, “তামিম ভাইয়ের পরামর্শে এখন আমিও মাসে ৫০ হাজার টাকা আয় করি।”
পরিশেষে:
তামিমের লক্ষ্য আগামী পাঁচ বছরে একটি ফ্রিল্যান্সিং ট্রেনিং ইনস্টিটিউট গড়ে তোলা। তাঁর পরামর্শ তরুণদের জন্য: “লক্ষ্য ঠিক করুন, প্রতিদিন শিখুন, আর বিশ্বাস রাখুন—অসম্ভব কিছু নেই!”