দীর্ঘ ১৪ বছরের রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধ ও সংকটের পর সিরিয়ায় শান্তি ও পুনর্গঠনের নতুন সূর্যোদয়ের ঘোষণা দিলেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়িপ এরদোয়ান। দামেস্কের ঐতিহাসিক উমাইয়া মসজিদ চত্বরে আয়োজিত এক সম্মেলনে তিনি বলেন, “সিরিয়ার মাটিতে আজ আবার আশার সূর্য উঠেছে। ধ্বংসস্তূপ থেকে আমরা গড়ে তুলব এক নতুন দেশ।” এই ঘোষণার মধ্য দিয়ে তুরস্ক-সিরিয়া কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনরুদ্ধার ও যৌথ পুনর্গঠন প্রকল্পের সূচনা হলো।
কেন এই ঘোষণা গুরুত্বপূর্ণ?
২০১১ সাল থেকে সিরিয়ায় চলা যুদ্ধে প্রায় ৫ লাখ মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন, ১ কোটির বেশি বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। তুরস্ক সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে সেনা অভিযান চালালেও ২০২৩ সাল থেকে শান্তি আলোচনা জোরালো হয়। এরদোয়ানের এই বক্তব্য যুদ্ধবিরতি ও স্থায়ী শান্তির ইঙ্গিত বলে মনে করা হচ্ছে।
এরদোয়ানের পরিকল্পনা কী?
- অর্থনৈতিক সহযোগিতা:তুরস্ক সিরিয়ায় ৫ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে রাস্তা, হাসপাতাল ও বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে।
- শরণার্থী ফেরত:তুরস্কে থাকা ৩৬ লাখ সিরিয়ান শরণার্থীকে ধাপে ধাপে ফেরত পাঠানো হবে।
- যৌথ নিরাপত্তা:সীমান্তে সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানে একসাথে কাজ করবে দুই দেশ।
কী বললেন সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট?
সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ (যিনি এই সম্মেলনে ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন) বলেন, “একটি যুদ্ধে সবাই হারেন। এবার আমরা জয়ের পথে হাঁটব।” তিনি তুরস্কের সহযোগিতাকে “ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত” বলে অভিহিত করেন।
স্থানীয়দের প্রতিক্রিয়া
দামেস্কের বাসিন্দা স্কুলশিক্ষক আহমেদ আল-মারি বলেন, “১০ বছর পর আমার ছাত্ররা আবার স্কুলে ফিরেছে। এই শান্তি যেন স্থায়ী হয়।”
আলেপ্পোর এক দোকানদার লায়লা খালেদ বলেন, “রাস্তা মেরামত হচ্ছে, বাজার জমেছে। মনে হচ্ছে জীবন ফিরে পাচ্ছি।”
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ভূমিকা
জাতিসংঘ, রাশিয়া ও ইরান এই শান্তি চুক্তিকে স্বাগত জানিয়েছে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “শান্তি প্রক্রিয়ায় আমরা কারিগরি সহায়তা দেব।”
শিশুদের জন্য সহজ ব্যাখ্যা
সিরিয়া অনেক বছর ধরে যুদ্ধে জ্বলছিল,ভাঙা ঘরের মতো। এখন তুরস্কের এরদোয়ান কাকা ও সিরিয়ার নেতারা মিলে সেই ঘর মেরামত করতে চান। তারা নতুন স্কুল, হাসপাতাল বানাবেন, যাতে সবাই সুখে থাকতে পারে।
চ্যালেঞ্জ কী?
- সন্ত্রাসী গোষ্ঠী:উত্তরাঞ্চলে ISIS-এর অবশিষ্টদের উপস্থিতি এখনো উদ্বেগের কারণ।
- অর্থনৈতিক সংকট:সিরিয়ার মুদ্রার মান স্থিতিশীল করা এখনো বড় চ্যালেঞ্জ।
- মাধ্যম স্বাধীনতা:অনেক সাংবাদিক এখনো সরকারি নিয়ন্ত্রণ নিয়ে শঙ্কিত।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
- ২০২৫ সালের লক্ষ্য:১০০০ স্কুল ও ৫০ হাসপাতাল নির্মাণ।
- সাংস্কৃতিক বিনিময়:সিরিয়ান ঐতিহ্য পুনরুদ্ধারে তুরস্কের জাদুঘর বিশেষজ্ঞরা সাহায্য করবেন।
শেষ কথা:
এরদোয়ানের এই ঘোষণা সিরিয়ার জনগণের মনে নতুন স্বপ্নের সঞ্চার করেছে। এখন চোখ আগামী দিনের দিকে—যেদিন সিরিয়া আবারও মরুভূমির গোলাপ হয়ে ফুটবে!