দীর্ঘ ১২ বছর পর বাংলাদেশ সফরে আসছেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিলাওয়াল ভুট্টো জরদারি। আগামী ৭ জানুয়ারি দুদিনের সরকারি সফরে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের সাথে বৈঠক করবেন। এই সফরে বাণিজ্য, সাংস্কৃতিক বিনিময় ও অভিন্ন সমস্যা সমাধানে সহযোগিতা বাড়ানোই মূল লক্ষ্য বলে জানিয়েছে দুই দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
কেন এই সফর গুরুত্বপূর্ণ?
২০১৩ সালে বাংলাদেশ-পাকিস্তানের শেষ উচ্চপর্যায়ের সফর হয়েছিল। এরপর থেকে সম্পর্কে উত্তাপ-ঠাণ্ডা থাকলেও গত কয়েক বছরে বাণিজ্য ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে উন্নতি হয়েছে। পররাষ্ট্র বিশেষজ্ঞ ড. তাসনিম আহমেদ বলেন, “এ সফর সম্পর্কের নতুন অধ্যায় খুলতে পারে। বিশেষ করে রোহিঙ্গা সংকট ও জলবায়ু পরিবর্তনে যৌথ উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে।”
আলোচনার প্রধান বিষয়
সূত্র মতে, বৈঠকের এজেন্ডায় থাকছে:
- বাণিজ্য বাড়ানো:পাকিস্তানের সাথে বর্তমান বাণিজ্য বছরে ৮০০ মিলিয়ন ডলার, যা ৫ গুণ বাড়ানোর লক্ষ্য।
- সাংস্কৃতিক বিনিময়:উর্দু ও বাংলা ভাষার বই, সিনেমা ও শিক্ষার্থী বিনিময় কর্মসূচি।
- ঐতিহাসিক ইস্যু:১৯৭১-এর যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে বাংলাদেশের দৃষ্টিভঙ্গি পুনর্ব্যক্ত করা।
ঢাকায় প্রস্তুতি
- নিরাপত্তা:বিমানবন্দর থেকে হোটেল পর্যন্ত তিন স্তরের নিরাপত্তা বলয়।
- সড়ক পরিষ্কার:মন্ত্রীর গাড়ি চলাচলের রাস্তা রং করা হয়েছে।
- সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান:বাংলাদেশের লোকসংগীত ও নৃত্যের আয়োজন করা হবে।
সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়া
ঢাকার বাসিন্দা কলেজশিক্ষক রাফিদ হাসান বলেন, “সম্পর্ক ভালো হলে দুটি দেশের মানুষই উপকৃত হবে। তবে অতীতের বেদনাদায়ক ইতিহাস ভুললে চলবে না।”
কর্মজীবী শাহনাজ আক্তার বলেন, “পাকিস্তানের সিনেমা আর ফ্যাশন আমাদের তরুণদের পছন্দ। বাণিজ্য বাড়লে পণ্য সস্তা হবে।”
কী বলছে ইতিহাস?
- ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে সম্পর্কে টানাপোড়েন।
- ২০১৫ সালে বাংলাদেশে পাকিস্তানিরা ক্রিকেট খেলতে এসেছিল, যা জনপ্রিয় হয়েছিল।
- ২০২৩ সালে পাকিস্তানে বন্যায় বাংলাদেশ ১০ লাখ টাকা সাহায্য পাঠায়।
শিশুদের জন্য সহজ ব্যাখ্যা
পাকিস্তান হলো আমাদের পাশের দেশ। অনেক বছর আগে আমরা তাদের কাছ থেকে আলাদা হয়েছিলাম। এখন দুটি দেশের মন্ত্রীরা মিলে কীভাবে বন্ধুত্ব বাড়ানো যায়, সেটা নিয়ে কথা বলবেন। বাণিজ্য বাড়লে তাদের আম আমরা কম দামে পেতে পারব!
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
সফর শেষে যৌথ ঘোষণাপত্রে যা থাকতে পারে:
- ভিসা শর্ত সহজ করে পর্যটন বাড়ানো।
- যৌথভাবে জলবায়ু ফান্ড গঠন।
- ক্রীড়া ও শিক্ষাখাতে নতুন প্রকল্প।
শেষ কথা:
এই সফর বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্কের ইতিহাসে একটি মাইলফলক হতে পারে। অতীতের ভুলগুলো শুধরে ভবিষ্যতের দিকে হাঁটার এই প্রচেষ্টা শুভ হোক—এটাই কামনা সবার।