ঈদের ছুটিতে পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাতে গ্রামের বাড়ি গিয়েছিলেন ২২ বছর বয়সী তানজিদ হোসেন ও তার বোন তাসনিমা আক্তার (১৯)। কিন্তু সৎভাই-বোনের হাতে নির্মমভাবে প্রাণ হারান তারা। সম্পত্তি বন্টন নিয়ে বিরোধকে কেন্দ্রে রেখে এ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে জানিয়েছে পুলিশ। ঘটনার দুই সন্দেহভাজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
ঘটনার বিবরণ:
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, তানজিদ ও তাসনিমা ঢাকায় পড়াশোনা ও চাকরি করতেন। ঈদের আগে তারা নিজ গ্রাম কালীগঞ্জের বাসায় ফিরেন। ১ এপ্রিল রাত সাড়ে ১০টার দিকে তাদের সৎভাই সজিব (২৮) ও সৎবোন সাবিনা (২৫) ঘরে ডেকে এনে ধারালো অস্ত্র দিয়ে হামলা করে। প্রতিবেশীদের চিৎকার শুনে দৌড়ে এলে সজিব ও সাবিনা পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে, কিন্তু স্থানীয়রা তাদের আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে।
পুলিশের বক্তব্য:
কালীগঞ্জ থানার ওসি মো. রকিবুল ইসলাম বলেন, “প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সৎভাই-বোনের বিরুদ্ধে সম্পত্তি নিয়ে দীর্ঘদিনের ক্ষোভের কথা স্বীকার করা হয়েছে। লাশ পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। হত্যার অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে।” তিনি আরও জানান, হত্যার মামলায় দুই আসামিকে আদালতে পাঠানো হয়েছে।
পরিবারের শোক ও প্রতিক্রিয়া:
তানজিদ-তাসনিমার মা সেলিনা বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, “সৎমায়ের সন্তানরা আমার সন্তানদের ভালো চোখে দেখত না। জমি ভাগ নিয়ে আগেও ঝগড়া হয়েছে। কিন্তু এত বড় জঘন্য কাজ করবে, ভাবিনি…”
চোখে দেখা সাক্ষীর বর্ণনা:
প্রতিবেশী কামরুল হোসেন বলেন, “রাতে হঠাৎ চিৎকার শুনে ছুটে গেলাম। তানজিদের গলায় রক্ত… সজিব হাতে ছুরি দেখে আমরা ধরে ফেলি। ভয়াবহ দৃশ্য!”
সমাজের মুখপাত্রদের প্রতিক্রিয়া:
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি আব্দুল মান্নান বলেন, “সম্পত্তি নিয়ে পারিবারিক হানাহানি বাড়ছে। আইনের সহায়তা নেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছি সবাইকে।”
মানবাধিকার কর্মী ফারহানা ইয়াসমিন বলেন, “অপরাধ যেন না ঘিরে রাখে ঈদের আনন্দ, সেদিকে সবার সচেতনতা জরুরি।”
নাগরিক সতর্কবার্তা:
পুলিশ ও সমাজকর্মীরা পরামর্শ দিয়েছেন:
১. পারিবারিক বিরোধে ধৈর্য্য ধরে সমাধান খুঁজুন।
২. জমি-সম্পত্তির বন্টনে স্থানীয় প্রশাসন বা আইনজীবীর সাহায্য নিন।
৩. কোনো সহিংসতার ইঙ্গিত পেলে অবিলম্বে ৯৯৯-এ জানান।
শেষ কথা:
ঈদের মতো পবিত্র সময়ে এই হত্যাকাণ্ড সমাজকে নতুন করে ভাবিয়ে তুলেছে। পারিবারিক বন্ধনই হোক হিংসার বিরুদ্ধে প্রধান শক্তি—এই প্রত্যাশা সকলের।