গত ৭ এপ্রিল ২০২৫ তারিখে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অনলাইনে ‘ফ্রিল্যান্সিং’ বা ‘আউটসোর্সিং’ কাজ দেওয়ার নাম করে তরুণ-তরুণী ও চাকরিপ্রার্থীদের কাছ থেকে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনা সামনে এসেছে। প্রতারকরা ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ ও নকল ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ভুক্তভোগীদের আর্থিক তথ্য চেয়ে বা ‘রেজিস্ট্রেশন ফি’ আদায় করে পালিয়ে যাচ্ছে। পুলিশের সাইবার ক্রাইম ইউনিট ইতিমধ্যে একাধিক অভিযোগ পেয়ে তদন্ত শুরু করেছে।
ঘটনার চিত্র:
সূত্রে জানা গেছে, প্রতারকরা প্রথমে ভুক্তভোগীদের ইনবক্সে মেসেজ পাঠায়। মেসেজে বলা হয়, “আপনার প্রোফাইল দেখে আমরা আপনাকে মাসে ৫০-৭০ হাজার টাকা বেতনের কাজ দিতে চাই।” এরপর কাজের বিস্তারিত জানতে তাদের একটি লিংকে ক্লিক করতে বলা হয়। ওই লিংকে গেলে নকল ওয়েবসাইটে ব্যক্তিগত তথ্য (বৈজ্ঞানিক নম্বর, ব্যাংক ডিটেইলস) চাওয়া হয়। কিছু ক্ষেত্রে ‘ট্রেনিং ফি’ বা ‘সফটওয়্যার কিনতে’ ৫-১০ হাজার টাকা পাঠাতে বাধ্য করা হয়। টাকা পাঠানোর পর প্রতারকরা যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়।
ভুক্তভোগীদের বক্তব্য:
রাজশাহীর কলেজছাত্রী সুমাইয়া আক্তার (ছদ্মনাম) বলেন, “একজন মহিলা ফেসবুকে আমাকে ডেটা এন্ট্রির কাজ দিতে চাইলেন। ৩ হাজার টাকা ‘রেজিস্ট্রেশন ফি’ দেবার পর আর ফোন ধরেন না।” চট্টগ্রামের বেকার যুবক রনি মিয়া (ছদ্মনাম) জানান, “একটি কোম্পানির নাম দিয়ে আমাকে ১৫ হাজার টাকা পাঠাতে বলা হয়েছিল সফটওয়্যার কিনতে। পরে বুঝলাম, ওয়েবসাইটটিই ভুয়া!”
পুলিশের সতর্কতা ও পদক্ষেপ:
সাইবার ক্রাইম বিভাগের এআইজি মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, “এই প্রতারণার শিকার হচ্ছেন মূলত চাকরির সন্ধান中 যুবক-যুবতীরা। আমরা ইতিমধ্যে ১০টি নকল ওয়েবসাইট বন্ধ করে দিয়েছি। তিনটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।” তিনি নাগরিকদের পরামর্শ দিয়েছেন:
১. অপরিচিত লিংকে ক্লিক করবেন না।
২. কখনো অগ্রিম টাকা পাঠাবেন না।
৩. কোম্পানির লাইসেন্স ও ঠিকানা যাচাই করুন।
কীভাবে চিনবেন নকল চাকরির বিজ্ঞাপন?
১. অতিরিক্ত লোভনীয় অফার: “১ মাসে ১ লাখ টাকা ইনকাম!”—এ ধরনের অপ্রাকৃতিক প্রস্তাব সন্দেহ করুন।
২. ব্যক্তিগত তথ্য চাওয়া: বৈজ্ঞানিক নম্বর, ব্যাংক পাসওয়ার্ড কখনো শেয়ার করবেন না।
৩. নিরাপদ প্ল্যাটফর্ম: শুধু বিশ্বস্ত সাইট (উদা: Upwork, Fiverr) ব্যবহার করুন।
বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ:
ডিজিটাল সিকিউরিটি এক্সপার্ট তানজিম আহমেদ বলেন, “অনলাইন কাজের ক্ষেত্রে গবেষণা জরুরি। কোম্পানির রিভিউ, ওয়েবসাইটের SSL সার্টিফিকেট (তালা চিহ্ন) দেখুন। সরাসরি প্রতিষ্ঠানে ফোন করে যাচাই করুন।”
আইনের হস্তক্ষেপ:
বাংলাদেশে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) আইন-২০০৬ এবং প্রতারণা সংক্রান্ত দণ্ডবিধি অনুযায়ী, এ ধরনের অপরাধের সর্বোচ্চ শাস্তি ৫ বছর কারাদণ্ড ও জরিমানা। তবে বিদেশি সার্ভার ব্যবহার করায় অনেক ক্ষেত্রে অপরাধীদের ধরতে বিলম্ব হয়।
শেষ কথা:
অনলাইন আয় একটি সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র, কিন্তু সচেতন না হলে তা বিপদ ডেকে আনতে পারে। প্রতিটি পদক্ষেপ নেওয়ার আগে যাচাই করুন, আত্মীয়-বন্ধুদের সতর্ক করুন।