গতকাল ৮ এপ্রিল ২০২৫ তারিখে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বাংলাদেশের জনপ্রিয় তারকাদের নাম ব্যবহার করে অনলাইন জুয়ার প্ল্যাটফর্মগুলোর ব্যাপক প্রচারণা চালানো হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সাকিব আল হাসান, বুবলী রহমান ও পিয়া শাহরীনসহ কয়েকজন তারকার ছবি ও নাম জুড়ে দেওয়া হয়েছে এসব বিজ্ঞাপনে। এ ঘটনায় সাধারণ মানুষের পাশাপাশি আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাও সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।
কী ঘটেছে?
সাম্প্রতিক দিনে ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম ও ইউটিউবে বাংলাদেশি তারকাদের ছবি ও নাম সংবলিত বিজ্ঞাপন ভাইরাল হচ্ছে। এসব বিজ্ঞাপনে দাবি করা হয়, “সাকিব আল হাসান প্রতিদিন এখানে জুয়া খেলেন!” বা “বুবলীর সুপার জ্যাকপট জিতুন!”। তবে সংশ্লিষ্ট তারকারা ইতিমধ্যে জানিয়েছেন, এগুলো তাদের অনুমোদিত প্রচারণা নয়। ফেসবুকের একটি পেজে পিয়ার ছবি ব্যবহার করে লেখা হয়েছে, “পিয়ার মতো ভাগ্যবান হোন, রোজ জেতেন ৫ লাখ টাকা!”।
তারকাদের প্রতিক্রিয়া:
অভিনেত্রী বুবলী রহমান বলেন, “আমার ছবি জুয়ার বিজ্ঞাপনে ব্যবহার করা হচ্ছে—এটা অত্যন্ত বিপজ্জনক ও অনৈতিক। আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানের ম্যানেজমেন্ট টিমও বিবৃতি দিয়ে বলেছে, “সাকিবের সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই। আমরা আইনি লড়াই করব।”
পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পদক্ষেপ:
সাইবার ক্রাইম ইউনিটের প্রধান মো. নূরুল ইসলাম বলেন, “অনলাইনে জুয়ার এসব বিজ্ঞাপন চিহ্নিত করে সংশ্লিষ্ট আইডিগুলো বন্ধ করা হচ্ছে। যারা তারকাদের ছবি অপব্যবহার করছে, তাদের বিরুদ্ধে মামলা প্রস্তুত।” তিনি নাগরিকদের আহ্বান জানান, “কোনো জুয়ার লিংকে ক্লিক করবেন না, পুলিশের হেল্পলাইন ৯৯৯-এ রিপোর্ট করুন।”
নাগরিক সমাজ ও বিশেষজ্ঞদের উদ্বেগ:
সমাজবিজ্ঞানী ড. ফারহানা আক্তার বলেন, “তারকাদের নামে জুয়ার প্রচারণা তরুণ প্রজন্মকে বিপথে ঠেলে দিচ্ছে। সরকার ও মিডিয়াকে একযোগে কাজ করতে হবে।”
এদিকে, শিক্ষার্থী আদনান হোসেন (১৭) বলে, “সাকিব ভাইয়ের নাম দেখে প্রথমে বিশ্বাস করেছিলাম। পরে বুঝলাম, এটা জুয়ার ফাঁদ!”
কী বলছে আইন?
বাংলাদেশে অনলাইন জুয়া সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি আইন-২০০৬ এবং জুয়া নিষিদ্ধকরণ আইন-১৮৬৭ অনুযায়ী, জুয়ার বিজ্ঞাপন দেওয়া বা অংশ নেওয়া শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তবে অপরাধীরা প্রায়ই বিদেশি সার্ভার ব্যবহার করে আইনের ফাঁক গলে কাজ চালায়।
সামাজিক মাধ্যমের ব্যবহারকারীদের সতর্কবার্তা:
১. তারকাদের নামে বিজ্ঞাপনে কখনো ক্লিক করবেন না।
২. “ফ্রি টাকা” বা “নিশ্চিত জয়” এর প্রলোভন এড়িয়ে চলুন।
৩. সন্দেহজনক লিংক পুলিশকে জানান ৯৯৯ নম্বরে।
শেষ কথা:
তারকাদের জনপ্রিয়তাকে পুঁজি করে জুয়ার মতো সামাজিক ব্যাধি ছড়ানো নৈতিকভাবে ঘৃণ্য। এ সমস্যা রোধে সচেতনতা ও কঠোর আইনপ্রয়োগ—দুটিই জরুরি।