নতুন বছরের প্রথম দিনে দেশের সকল শিক্ষার্থীর হাতে পাঠ্যবই পৌঁছে দেওয়ার সরকারি প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করতে না পারায় গভীর দুঃখ প্রকাশ করেছেন শিক্ষা উপদেষ্টা ড. মো. নাসির উদ্দিন। আজ এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “আমাদের লক্ষ্য ছিল বছরের শুরুতেই প্রতিটি শিশুর হাতে বই দেওয়া। কিন্তু কিছু অপ্রত্যাশিত সমস্যার কারণে এটি সম্ভব হয়নি। আমরা পরিবার ও শিক্ষার্থীদের কাছে ক্ষমা চাইছি।”
কেন বিলম্ব হলো?
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বই বিতরণে বিলম্বের তিনটি প্রধান কারণ:
১. মুদ্রণযন্ত্রে সমস্যা: দেশের দুটি বড় প্রিন্টিং প্রেসে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বইয়ের চাহিদা মেটানো যায়নি।
২. পরিবহন ধর্মঘট: ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে ট্রাক চালকদের ধর্মঘটের ফলে বই বিভিন্ন জেলায় পাঠানো বাধাগ্রস্ত হয়।
৩. অতিরিক্ত চাহিদা: কিছু অঞ্চলে নতুন ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা পূর্বাভাসের চেয়ে বেশি ছিল।
ড. নাসির উদ্দিন যোগ করেন, “আমরা প্রতিদিন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। যত দ্রুত সম্ভব সবাইকে বই দেওয়া হবে।”
শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের প্রতিক্রিয়া
ঢাকার তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী রাইসা আক্তার বলে, “স্কুলে গিয়েই শুনলাম, নতুন বই আসেনি। পুরোনো বই দিয়ে ক্লাস শুরু করলাম। কিন্তু নতুন বই পেতে আমার খুব ইচ্ছে!”
নেত্রকোণার একজন অভিভাবক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “সরকারের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গে মন খারাপ হয়েছে। তবে আশা করি, সপ্তাহখানেকের মধ্যে বই পাব।”
কীভাবে সমাধান করা হচ্ছে?
মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সমস্যা দ্রুত সমাধানের জন্য নেওয়া হয়েছে কয়েকটি পদক্ষেপ:
- প্রিন্টিং প্রেসগুলো ২৪ ঘন্টা কাজ করবে।
- বেসরকারি পরিবহন সংস্থার সাহায্যে বই পাঠানো হচ্ছে।
- প্রত্যন্ত অঞ্চলের স্কুলগুলোকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে।
ড. নাসির উদ্দিন নিশ্চিত করেন, “১০ জানুয়ারির মধ্যে ৯০% শিক্ষার্থীর হাতে বই পৌঁছে যাবে। বাকিগুলো ১৫ জানুয়ারির আগেই দেওয়া হবে।”
শিক্ষকদের পরামর্শ
রাজশাহীর একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুরাইয়া বেগম বলেন, “বই না আসা পর্যন্ত আমরা পুরোনো বই ও ডিজিটাল কন্টেন্ট দিয়ে ক্লাস চালিয়ে যাচ্ছি। অভিভাবকরা চিন্তা না করে স্কুলে নিয়মিত পাঠান।”
পরবর্তী পদক্ষেপ
শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, ভবিষ্যতে এমন সমস্যা যাতে না হয়, তার জন্য একটি জরুরি টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। আগামী বছর থেকে বই মুদ্রণ ও বিতরণের প্রক্রিয়া তিন মাস আগে শুরু হবে বলেও ঘোষণা দেওয়া হয়।
শেষ কথা:
শিক্ষা উপদেষ্টার এই স্বীকারোক্তি ও দ্রুত সমাধানের চেষ্টা সাধারণ মানুষের মধ্যে কিছুটা স্বস্তি এনেছে। এখন সকলের চোখ ১০ জানুয়ারির দিকে—যেদিন ঘরে ঘরে বই পৌঁছানোর নতুন তারিখ ঠিক করা হয়েছে।