দীর্ঘ ৫ বছরের গবেষণা, পরিকল্পনা ও পরীক্ষার পর আজ (৮ এপ্রিল ২০২৫) বাংলাদেশ রেলওয়ের উদ্যোগে চালু হয়েছে দেশের প্রথম ১০০% ইলেকট্রিক ট্রেন সার্ভিস। এই ট্রেনটি রাজধানী ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম রুটে চলাচল করবে, যা যাত্রীদের সময় ও খরচ দুই-ই কমাবে পাশাপাশি পরিবেশ দূষণ রোধে ভূমিকা রাখবে।
কেন এই প্রকল্প?
২০১৯ সালে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলা ও জ্বালানি সাশ্রয়ের লক্ষ্যে সরকার এই ইলেকট্রিক ট্রেন প্রকল্প হাতে নেয়। সমীক্ষায় দেখা গিয়েছিল, ডিজেল চালিত ট্রেনের তুলনায় ইলেকট্রিক ট্রেন কার্বন নিঃসরণ ৭০% কমায় এবং প্রতি বছর প্রায় ৩০% জ্বালানি সাশ্রয় করে। প্রকল্পের প্রধান পরামর্শক ড. সায়মা ইসলাম বলেন, “এই ট্রেনের ব্যাটারি সৌরশক্তি ও গ্রিড বিদ্যুৎ দুইভাবেই চার্জ করা যায়। এটি একবার চার্জে ৫০০ কিলোমিটার পর্যন্ত চলতে সক্ষম।”
যাত্রীদের জন্য সুবিধা
- ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যেতে সময় লাগবে মাত্র ৩ ঘণ্টা ২০ মিনিট (পূর্বে ৬-৭ ঘণ্টা)।
- ভাড়া আগের তুলনায় ১৫% কম।
- ট্রেনে থাকছে অত্যাধুনিক এয়ার ফিল্টারেশন সিস্টেম, ওয়াই-ফাই ও সোলার-পাওয়ারে চার্জ করার সুবিধা।
কী বলছেন কর্তৃপক্ষ?
বাংলাদেশ রেলওয়ের মন্ত্রী জনাব ফারুক আহমেদ জানান, “এটি কেবল একটি ট্রেন নয়, দেশের পরিবহন খাতে এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ। আগামী ৫ বছরে আমরা দেশের ৫০% রেলপথে ইলেকট্রিক ট্রেন চালু করার লক্ষ্য নিয়েছি।”
যাত্রী ও স্থানীয়দের প্রতিক্রিয়া
প্রথম ট্রেনে চড়ে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যাওয়া কলেজছাত্রী আয়েশা আক্তার বলেন, “ট্রেনটি শান্ত, দ্রুত এবং সিটে জানালায় লাগানো টাচ স্ক্রিনে রুটের তথ্য দেখা যায়। অনেক মজা হয়েছে!”
এদিকে, চট্টগ্রামের স্থানীয় বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম বলেন, “ডিজেল ট্রেনের শব্দ ও ধোঁয়ায় কষ্ট হতো। নতুন ট্রেনে এলাকার বাতাসও পরিষ্কার থাকবে বলে আশা করি।”
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, ২০৩০ সালের মধ্যে দেশের সকল মেইনলাইন রুটে ইলেকট্রিক ট্রেন চালু করা হবে। এছাড়া, ট্রেনের সোলার প্যানেল বাড়িয়ে জ্বালানি স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের লক্ষ্যে কাজ চলছে।
সংক্ষিপ্ত তথ্য
- প্রথম রুট:ঢাকা কমলাপুর – চট্টগ্রাম
- গতিসীমা:ঘণ্টায় ১৬০ কিলোমিটার
- পরিবেশগত প্রভাব:বছরে ১২,০০০ টন কার্বন ডাই-অক্সাইড কমাবে
- যাত্রী ক্ষমতা:প্রতি ট্রেনে ৮০০ জন
শেষ কথা
ইলেকট্রিক ট্রেন চালু হওয়াকে বাংলাদেশের পরিবহন খাতে একটি “গ্রিন রেভোলিউশন” বলে অভিহিত করছেন বিশেষজ্ঞরা। এই প্রকল্প যেমন অর্থনৈতিকভাবে লাভবান করবে, তেমনি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি সবুজ বাংলাদেশ গড়তে সাহায্য করবে।