গণমাধ্যমকর্মীদের উদ্দেশে দায়িত্বশীল ও নৈতিক সাংবাদিকতার আহ্বান জানিয়েছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা ড. তাসনিম আহমেদ। আজ রাজধানীর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “সামাজিক সম্প্রীতি রক্ষা এবং ভুল তথ্য প্রতিরোধে সাংবাদিকদের ভূমিকা অপরিসীম। সংবাদ পরিবেশনে সততা, স্বচ্ছতা ও মানবিক দায়িত্বশীলতা জরুরি।” তাঁর এই বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
কী বললেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা?
ড. তাসনিম আহমেদ তাঁর ভাষণে গুরুত্ব দেন তিনটি বিষয়ে:
১. মিথ্যা তথ্য এড়ানো: কোনো খবর প্রকাশের আগে সূত্র যাচাই করা এবং গুজব ছড়ানো থেকে বিরত থাকা।
২. সংবেদনশীলতা: ধর্ম, জাতি বা লিঙ্গভিত্তিক সংবাদে সতর্কতা অবলম্বন।
৩. তরুণ প্রজন্মের দায়িত্ব: ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে যুব সাংবাদিকদের নৈতিকতা বজায় রাখা।
তিনি উদাহরণ টেনে বলেন, “কোনো সংবাদ যদি একটি পরিবারকে ভাঙতে পারে, সেটি প্রচারের আগে ১০ বার ভাবুন। গণমাধ্যম সমাজের আয়না, এই আয়নায় বিভ্রান্তি নয়, সত্য প্রতিফলিত হোক।”
কেন এই আহ্বান?
গত কয়েক মাসে সামাজিক মাধ্যমে ভুয়া খবর, হেট স্পিচ এবং অপরিপক্ব তথ্য ছড়ানোর ঘটনা বেড়েছে। এতে সমাজে উত্তেজনা ও বিভ্রান্তি তৈরি হচ্ছে। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “আমরা বিশ্বাস করি, সাংবাদিকরা জাতির বিবেক। তাদের হাতেই পারে ভুল পথে যাওয়া সমাজকে সঠিক পথে আনা।”
সাংবাদিকদের প্রতিক্রিয়া
ঢাকা প্রেস ক্লাবের সভাপতি মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, “এই আহ্বান সময়োপযোগী। আমরা নিজেদের কাজের মানোন্নয়নে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করব।”
তরুণ সাংবাদিক ফারহানা আক্তার বলেন, “আমরা চেষ্টা করব ভাইরাল হওয়ার চেয়ে সত্যি কথাটা বলতে।”
সরকারের সহায়তা কী?
ড. তাসনিম জানান, গণমাধ্যমের দায়িত্বশীলতা বাড়াতে সরকার নিচে পদক্ষেপ নেবে:
- ফ্যাক্ট-চেকিং ওয়ার্কশপ:মাসিক ভিত্তিতে সাংবাদিকদের জন্য প্রশিক্ষণ।
- জরুরি হটলাইন:ভুয়া খবর রিপোর্ট করার জন্য ২৪/৭ নম্বর চালু করা হবে।
- সামাজিক মিডিয়া গাইডলাইন:ফেসবুক, টিকটকের মতো প্ল্যাটফর্মের সাথে সমন্বয় করে গুজব নিয়ন্ত্রণ।
সাধারণ মানুষের পরামর্শ
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা জনগণকেও সচেতন হওয়ার পরামর্শ দেন: “শেয়ার করার আগে ভাবুন—এই খবরটি কি সত্যি? এটি কি কারও ক্ষতি করবে? নিজের বিবেককে প্রশ্ন করুন।”
পরবর্তী পদক্ষেপ
- ফেব্রুয়ারির মধ্যে “নৈতিক সাংবাদিকতা নীতিমালা” চূড়ান্ত করা হবে।
- মার্চে দেশব্যাপী ফ্যাক্ট-চেকিং ক্যাম্পেইন শুরু হবে স্কুল-কলেজে।
শেষ কথা:
গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও দায়িত্বশীলতা একটি সুস্থ সমাজের চাবিকাঠি। পররাষ্ট্র উপদেষ্টার এই আহ্বান শুধু সাংবাদিকদেরই নয়, সকল নাগরিককে সত্যের পথে চলার অনুপ্রেরণা দেবে।