বাহরাইনে বসবাসরত বাংলাদেশি প্রবাসী ও শ্রমিকদের জন্য আলাদা ভিসা ক্যাটাগরি চালু এবং ভিসা প্রক্রিয়া সহজীকরণের অনুরোধ জানিয়েছে স্থানীয় বাংলাদেশি কমিউনিটি নেতারা। গতকাল বাহরাইন সরকারের শ্রম ও অভিবাসন মন্ত্রণালয়ে একটি স্মারকলিপি জমা দেওয়া হয়েছে। বাহরাইনে বাংলাদেশিদের সংখ্যা প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার, যাদের বেশিরভাগই নির্মাণ ও সেবাখাতে কর্মরত।
কী চাইছে কমিউনিটি?
- বাংলাদেশি-স্পেসিফিক ভিসা ক্যাটাগরি:শ্রমিক, পেশাজীবী ও ব্যবসায়ীদের জন্য আলাদা ভিসা সুবিধা।
- ভিসা ফি কমানো:বর্তমান ফি অনেক বেশি, যা নিম্নআয়ের শ্রমিকদের জন্য বোঝা।
- দীর্ঘমেয়াদি ভিসার সুযোগ:দক্ষ কর্মীদের ৫ বছর মেয়াদি ভিসা দেওয়ার আবেদন।
- জরুরি ভিসা সেবা:অসুস্থতা বা পরিবারিক জরুরি অবস্থায় দ্রুত ভিসা প্রসেসিং।
কমিউনিটি নেতাদের যুক্তি
বাহরাইন বাংলাদেশি ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. আলমগীর হোসেন বলেন, “ভিসা জটিলতা ও উচ্চ খরচের কারণে অনেক শ্রমিক হয়রানির শিকার হন। সহজ প্রক্রিয়া হলে দুদেশের সম্পর্কও শক্তিশালী হবে।”
প্রবাসী ব্যবসায়ী শামীমা আক্তার যোগ করেন, “বাহরাইনে বাংলাদেশি রেস্টুরেন্ট ও মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিগুলোতে আমাদের অবদান বাড়বে, যদি ভিসা সিস্টেম সহজ হয়।”
বর্তমান ভিসা নীতিতে কী সমস্যা?
- বাহরাইনে সাধারণতকোম্পানি-স্পনসরড ভিসা দেওয়া হয়। নতুন চাকরি পেলে ভিসা পরিবর্তন জটিল।
- পরিবার নিয়ে আসতে গেলে আয় ও আবাসনের কঠোর শর্ত পূরণ করতে হয়।
- ভিসা রিনিউয়াল ফি গড়ে ৩০০-৫০০ বাহরাইনি দিনার (প্রায় ৮০-১২০ হাজার টাকা), যা অনেকের সাধ্যের বাইরে।
বাহরাইন সরকারের প্রতিক্রিয়া
শ্রম মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “আমরা বাংলাদেশিদের অবদান স্বীকার করি। তাদের আবেদনটি প্রক্রিয়াধীন আছে।” বাহরাইনের মানবাধিকার সংস্থা মিগ্র্যান্ট ওয়ার্কার্স প্রোটেকশন সোসাইটি এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে।
দুই দেশের সম্পর্ক
বাহরাইনের সাথে বাংলাদেশের বাণিজ্য ও শ্রম বাজারে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। ২০২৪ সালে প্রায় ১৫ হাজার বাংলাদেশি নতুন ভিসায় বাহরাইনে গেছেন। দেশটিতে বাংলাদেশি রেমিট্যান্স বছরে প্রায় ৬০০ মিলিয়ন ডলার।
শিশুদের জন্য সহজ ব্যাখ্যা
ভিসা হলো একটি দেশে ঢোকার অনুমতিপত্র। বাহরাইনে বাংলাদেশি দাদা-চাচারা কাজ করতে গেলে এই অনুমতি লাগে। এখন তাঁরা চাইছেন, যেন এই কাগজপত্র নেওয়া সহজ ও সস্তা হয়।
পরবর্তী পদক্ষেপ
বাংলাদেশ দূতাবাস আগামী মাসে বাহরাইন কর্তৃপক্ষের সাথে বৈঠক করবে। এছাড়া, প্রবাসীরা সোশ্যাল মিডিয়ায় অনলাইন পিটিশন চালু করার পরিকল্পনা করছেন।
শেষ কথা:
ভিসা নীতির সংস্কার হলে বাহরাইনে বাংলাদেশিদের কাজের সুযোগ ও নিরাপত্তা দুই-ই বাড়বে। এটি দুদেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ককেও নতুন উচ্চতায় নেবে বলে আশা করছেন বিশ্লেষকরা।