৫০তম বিসিএস: যে ৩টি কারণে এবারের কাটমার্ক কম হতে পারে! যা বললেন বিশেষজ্ঞরা

সকালের বার্তা ক্যারিয়ার ডেস্ক: বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষা মানেই যেন এক অজানা আতঙ্ক। বিশেষ করে সাম্প্রতিক বিসিএসগুলোতে (যেমন ৪৬তম) কাটমার্ক বা পাস নম্বর আকাশচুম্বী হওয়ায় অনেক ভালো প্রার্থীর স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে। তবে সদ্য প্রকাশিত ৫০তম বিসিএস-এর বিজ্ঞপ্তি ও আনুষঙ্গিক বিষয়াবলি বিশ্লেষণ করে কিছুটা আশার আলো দেখছেন ক্যারিয়ার বিশেষজ্ঞরা।

গত বুধবার (নভেম্বর, ২০২৫) প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে মোট ২,১৫০টি পদের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। পিএসসির নতুন রোডম্যাপ এবং পদের বিন্যাস পর্যালোচনা করে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বিগত কয়েকটি বিসিএস-এর তুলনায় এবার প্রিলিমিনারির ‘সেফ জোন’ বা কাটমার্ক কিছুটা কম হতে পারে।

সকালের বার্তা-র পাঠকদের জন্য আজকের প্রতিবেদনে থাকছে সেই ৩টি প্রধান কারণ, যা এবারের বিসিএস যাত্রাকে কিছুটা সহজ করতে পারে।

১. বিশাল পদসংখ্যা ও টেকনিক্যাল পদের আধিক্য

কাটমার্ক কম বা বেশি হওয়ার প্রধান নিয়ামক হলো মোট শূন্য পদ।

• পরিসংখ্যান: ৫০তম বিসিএসে মোট পদ ২,১৫০টি। এর মধ্যে স্বাস্থ্য ক্যাডারে ৬৫০টি এবং অন্যান্য প্রফেশনাল ক্যাডারেও প্রচুর পদ রয়েছে।

• বিশ্লেষণ: সাধারণত জেনারেল ক্যাডারের চেয়ে টেকনিক্যাল বা প্রফেশনাল ক্যাডারে কাটমার্ক তুলনামূলক কম থাকে। যেহেতু এবার মোট পদের সংখ্যা ২ হাজারের বেশি, তাই পিএসসি নিয়ম অনুযায়ী প্রিলিমিনারিতে টিকবে প্রায় ২০ থেকে ২৫ হাজার প্রার্থী (পদসংখ্যার ১০-১২ গুণ)। বেশি সংখ্যক প্রার্থী টেকাতে হলে স্বাভাবিকভাবেই কাটমার্ক নিচে নামাতে হয়।

বিশেষজ্ঞ মত: “পদসংখ্যা যখন ১৫০০-এর নিচে থাকে, তখন প্রতিযোগিতা তীব্র হয়। কিন্তু ২ হাজারের বেশি পদ থাকলে এবং স্বাস্থ্য ও শিক্ষার মতো ক্যাডারে বড় নিয়োগ থাকলে কাটমার্ক ব্যালেন্সড হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।” — মো. আশরাফুল ইসলাম, বিসিএস বিশ্লেষক।

২. প্রস্তুতির সময়ের স্বল্পতা (মাত্র ৬০ দিন!)

এটি একটি মনস্তাত্ত্বিক এবং বাস্তবিক কারণ।

• প্রেক্ষাপট: পিএসসির রোডম্যাপ অনুযায়ী, প্রিলিমিনারি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে ৩০ জানুয়ারি ২০২৬। অর্থাৎ বিজ্ঞপ্তির পর প্রার্থীরা সময় পাচ্ছেন মাত্র ২ মাস বা ৬০ দিন।

• প্রভাব: বিসিএস একটি দীর্ঘমেয়াদী প্রস্তুতির পরীক্ষা। হঠাৎ করে এত কম সময়ে সিলেবাস শেষ করা নতুন প্রার্থীদের জন্য প্রায় অসম্ভব। এমনকি অভিজ্ঞ প্রার্থীরাও রিভিশন দিতে হিমশিম খাবেন।

• ফলাফল: প্রস্তুতির ঘাটতি থাকায় পরীক্ষার হলে অনেক প্রার্থী জানা উত্তর ভুল করবেন (Negative Marking)। যখন সামগ্রিকভাবে পরীক্ষার্থীদের পারফরম্যান্স অ্যাভারেজ হয়, তখন কাটমার্ক অটোমেটিক্যালি কমে আসে।

৩. প্রশ্নপত্রের মান ও নেগেটিভ মার্কিংয়ের প্রভাব

সাম্প্রতিক সময়ে পিএসসি প্রশ্নপদ্ধতিতে পরিবর্তন এনেছে। এখন আর শুধু মুখস্থ বিদ্যায় কাজ হয় না, বরং ‘এনালিটিক্যাল’ বা বিশ্লেষণধর্মী প্রশ্নের সংখ্যা বাড়ছে।

• বিশ্লেষণ: যদি প্রশ্নপত্র ‘স্ট্যান্ডার্ড’ বা কিছুটা কঠিন করা হয়, তবে ১১০-১১৫ নম্বর তোলাই কঠিন হয়ে পড়ে।

• নেগেটিভ মার্কিং: প্রতি ভুলের জন্য ০.৫০ নম্বর কাটা যায়। কম সময়ে প্রস্তুতি নিয়ে পরীক্ষা দিতে যাওয়া প্রার্থীরা সাধারণত বেশি দাগাতে গিয়ে বেশি নেগেটিভ মার্কিংয়ের শিকার হন। এটিও সামগ্রিক কাটমার্ক কমিয়ে রাখতে ভূমিকা রাখবে।

তাহলে ‘সেফ জোন’ কত?

যদিও পরীক্ষার প্রশ্ন না দেখে কাটমার্ক বলা অসম্ভব, তবুও বিগত দিনের ট্রেন্ড ও বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় বিশেষজ্ঞরা একটি ধারণা দিয়েছেন:

• জেনারেল ক্যাডার: ১১০ থেকে ১১৫-এর মধ্যে থাকলে নিরাপদ ভাবা যেতে পারে।

• টেকনিক্যাল/প্রফেশনাল ক্যাডার: ১০৫-এর আশেপাশে থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।

(বি:দ্র: এটি সম্পূর্ণ ধারণা মাত্র। প্রশ্নের মানের ওপর ভিত্তি করে এটি কমবেশি হতে পারে।)

পরীক্ষার্থীদের করণীয়

কাটমার্ক নিয়ে দুশ্চিন্তা না করে শিক্ষা সংবাদ ডেস্কের পরামর্শ হলো নিজের সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নেওয়া। ১. সিলেক্টিভ স্টাডি: সব পড়তে যাবেন না। বিসিএস সিলেবাসের গুরুত্বপূর্ণ টপিকগুলো রিভিশন দিন। ২. মডেল টেস্ট: নেগেটিভ মার্কিং কমানোর জন্য প্রচুর মডেল টেস্ট দিন। ৩. ধৈর্য: পরীক্ষার হলে কঠিন প্রশ্ন দেখে ঘাবড়াবেন না। প্রশ্ন কঠিন হলে তা সবার জন্যই কঠিন, আর কাটমার্কও কমবে।

৫০তম বিসিএস আপনার স্বপ্নের ক্যাডার হওয়ার সুযোগ করে দিক—এটাই প্রত্যাশা। নিয়মিত বিসিএস গাইডলাইন পেতে চোখ রাখুন আমাদের পোর্টালে।

সচরাচর জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন (FAQ)

১. ৫০তম বিসিএস প্রিলিমিনারিতে কত পেলে পাস করা যাবে? উত্তর: পিএসসি নির্দিষ্ট কোনো পাস নম্বর নির্ধারণ করে না। তবে পদসংখ্যা এবং প্রশ্নের মানের ওপর ভিত্তি করে সাধারণত ১১০-১২০ নম্বরকে নিরাপদ স্কোর বা সেফ জোন ধরা হয়।

২. পদসংখ্যা বেশি হলে কি কাটমার্ক কমে? উত্তর: সাধারণত হ্যাঁ। পদসংখ্যা বেশি হলে লিখিত পরীক্ষার জন্য বেশি সংখ্যক প্রার্থীকে নির্বাচন করা হয়, ফলে কাটমার্ক বা সর্বনিম্ন পাস নম্বর কিছুটা নিচের দিকে থাকে।

৩. ৫০তম বিসিএসের নেগেটিভ মার্কিং কত? উত্তর: প্রতিটি ভুল উত্তরের জন্য প্রাপ্ত নম্বর থেকে ০.৫০ নম্বর কেটে নেওয়া হবে। অর্থাৎ ২টি ভুল উত্তরের জন্য ১ নম্বর কাটা যাবে।

আরও পড়ুন: ক্যাডেট কলেজ ভর্তি পরীক্ষা ২০২৬: আবেদন, সিলেবাস ও প্রস্তুতির পূর্ণাঙ্গ গাইড